Sun. Dec 22nd, 2024

ঝিনাইদহ নিউজ

সবার আগে সর্বশেষ

আবারো বিতর্কিত হতে চলেছে মেলার “র‍্যাফেল ড্র”

1 min read
আবারো বিতর্কিত হতে শুরু করেছে মেলার “র‍্যাফেল ড্র”

আবারো বিতর্কিত হতে শুরু করেছে মেলার “র‍্যাফেল ড্র”

আবারো বিতর্কিত হতে শুরু করেছে মেলার “র‍্যাফেল ড্র”
আবারো বিতর্কিত হতে শুরু করেছে মেলার “র‍্যাফেল ড্র”

নানা রকম মেলা, পার্বনের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। বাঙ্গালী সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এই মেলা। বাংলার এই সংস্কৃতিতে থাকে সব ধর্মের মানুষের সংস্কৃতির সমন্বয়। কয়েক বছর আগেও কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায় বা কোন খোলা মাঠে সুবিশাল পরিসরে আয়োজন করা হত মেলার। মেলাকে ঘিরে গ্রামীণ জীবনে আসতো প্রানচাঞ্চল্য। গ্রামের তৎকালীন এসকল মেলায় যাত্রা, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, জারি-সারি, রামায়ন, গম্ভীরা কীর্তন, পালার আসর, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, লাঠি খেলা, হাডুডু খেলা মুগ্ধ করে আগত দর্শনার্থীদের।

দিন বদলের সাথে সাথে বদলাতে শুরু করে এসকল মেলার ধরন। বিভিন্ন দিবস বা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে আয়োজীত হতে  থাকে একুশে বই মেলা, বিজয় মেলা থেকে শুরু করে ডিজিটাল আইসিটি মেলা। তালিকায় অনেক নতুন মেলার নাম যোগ হতে থাকে দিনে দিনে। সাথে গ্রামীন সেই সুবিশাল মেলার প্রানচাঞ্চল্যও হারাতে থাকে। যাত্রা, পুতুল নাচের সেই নির্মল আনন্দ বিলুপ্ত হয়ে যোগ হতে থাকে নগ্ন-অশালীনতা। ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, লাঠি খেলা, হাডুডু খেলার যায়গা দখল করে নিতে শুরু করে ওয়ান্টেন, হাউজি সহ বিভিন্ন ধরনের জুয়ার আসর। সেটা কখনো লুকোচুরি করে, আবার কখনো প্রকাশ্য।

দেশের সকল জেলার মতই প্রতিটি উপলক্ষকে কেন্দ্র করে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করা হয়। শীতের শুরুর সাথে সাথে বাড়তে থাকে মেলার আসর। কিন্তু পরিচ্ছন্ন বিনোদনের সেই মেলাকে কলুশিত করতে শুরু করে যাত্রার নামে অশ্লিলতা ও বিভিন্ন ধরনের জুয়ার আসর। এসবের সাথে আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ হয় “র‍্যাফেল ড্র” এর নামের লটারি প্রতিযোগিতার কল্যানে। নিম্নবিত্তদের কাছে ১০/২০ টাকা মুল্যের লটারিতে লক্ষ টাকার পুরস্কার এর জনপ্রিয়তাকে নিয়ে যায় ব্যাপক পরিসরে। কিন্ত এখানেও দেখা দিতে থাকে বিভিন্ন সমস্য।

ঝিনাইদহের প্রেক্ষাপটে গত বছর থেকে সর্বোচ্চো মাত্রায় জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে “র‍্যাফেল ড্র” এর নামে এই লটারি প্রতিযোগিতা। আর তখন থেকেই ঘটতে থাকে নানান অপ্রিতিকর ঘটনা। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র পরিসরে লটারি বিক্রির টাকা ছিনতাই ও টিকিট নষ্ট করে ফেলা থেকে শুরু হয়। কখনোবা পুরস্কার না দিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে লটারির আয়োজকরা।

আবারো বিতর্কিত হতে শুরু করেছে মেলার “র‍্যাফেল ড্র”
আবারো বিতর্কিত হতে শুরু করেছে মেলার “র‍্যাফেল ড্র”

গত বছরের শেষ থেকে চলতি বছরের শুরুর ভিতর শহরের শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে আয়োজন করা হয় কসমেটিক্স মেলার। সেখানেও ব্যাবস্থা করা হয় “র‍্যাফেল ড্র” তথা লটারির। জেলার ৬টি উপজেলার তৃনমূল পর্যায়ে রিক্সা, ইজিবাইক ও ট্যাম্পুর মাধ্যমে তাদের টিকিট বিক্রি শুরু হয়, সেই সাথে শুরু হয় বিভিন্ন বিতর্কতা ও বিশৃংখলার। সর্বশেষ পর্যায়ে আইন-শৃংখলা রক্ষার সার্থে কঠর প্রশাসনিক পদক্ষেপে “র‍্যাফেল ড্র” বন্ধ করা হলে সেদিনের বিক্রিত টিকিটের ড্র সহ ২ দিনের পুরস্কার না দিয়ে হুট করে জেলার অজস্র সাধারন মানুষের ২০ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় এর আয়োজকরা। খবর জেলায় ছড়িয়ে পড়লে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সাধারন মানুষ এবং বিভিন্ন স্থানে টিকিট বিক্রেতাদের উপর চড়াও হয়ে উত্তম-মাধ্যম দেয় তাদের। কোথাও আবার তাদের কাছ থেকে বিক্রিত টিকিটের টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটে। পরবর্তীতে আবারো প্রশাসনের চেষ্টায় পরিস্থিতি ঠান্ডা হলেও, সেবার “র‍্যাফেল ড্র” এর নামে আর কোন লটারির আয়োজন হয়নি।

কিন্তু চলতি শীত মৌসুমের শুরু থেকে আয়োজিত বিভিন্ন মেলায় আবারো আনা হয় “র‍্যাফেল ড্র” তথা সেই সকল লটারি। আর এবারের পর্বের শুরুতেই ঘটতে শুরু করে অপ্রীতিকর ঘটনা। অভিযোগে বলা হয়, গত ১০ ডিসেম্বর শৈলকুপার ভাটই এলাকায় মেলা আয়োজকদের যোগসাজসে “উল্লাস রাফেল ড্র” নামের লটারী প্রতারক চক্র জনগনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে পালিয়ে যায়। গত ১০ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধায় লটারী ড্র এর সময় কাউকে পাওয়া যায়নি। “উল্লাস রাফেল ড্র” সেদিন লটারি ড্র না করে তারা সবাই মেলা থেকে পালিয়ে যায়। মেলার আয়োজনকারী সাথী সমাজ কল্যাণ সংস্থার ভুমিকা রহস্যজনক ছিল বলে অভিযোগও করেন লটারী ক্রেতারা । শত শত মানুষ প্রতারনার শিকার হয় এ মেলায় লটারী কিনে। জানা যায়, সে সন্ধায় মেলামাঠে এপ্যাচি মোটর সাইকেল সহ বিভিন্ন মুল্যবান পুরষ্কার দেয়ার কথা ছিল লটারীতে।

এদিকে মেলা কমিটির প্রধান টি এ রাজু তাদের যোগসাজসের কথা অস্বীকার করে তখন জানান, যারা লটারী কিনেছে তাদের খেলা পরবর্তী দিন যে কোন ভাবে হোক করানো হবে এবং পুর্বের নিয়ম অনুসারে পুরষ্কারও দেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। তবে এ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় অবধি সেসকল লটারির ড্র সম্পন্ন করা হয়নি বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। এলাকাবাসির বিশ্বাস, তাৎক্ষনিক পরিস্তিথি সামলাতেই টি এ রাজু এ আশ্বাস দিলেও তিনি তা পুর্ণ করবেন না।  এর আগে শৈলকুপার রতিডাঙ্গা গ্রামে লটারী আয়োজকরা ২ দিনের পুরষ্কার না দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে চম্পট দেয়।

“র‍্যাফেল ড্র” এর নামে বিভিন্ন লটারী প্রতারক চক্র এভাবেই দিনের পরদিন দিন মানুষ ঠকিয়ে চলেছে নিরবে। সমাজের গরীব মানুষের ঘামে ভেজা টাকা গুলো সুক্ষবুদ্ধি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে এই প্রতারক চক্র।

বিঃদ্রঃ পুর্নতথ্য সম্বলিত ও অতিসাম্প্রতিক আরেকটি ঘটনার আমোন্ত্রন রইলো…

(চলবে…)

 

আল আমিল সজল,

ঝিনাইদহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *