‘ওসি-ডিসি নিজেদের জমিদার মনে করে’
1 min readঝিনাইদহ নিউজ: ‘কিছু কিছু ওসি-ডিসি নিজেদের জমিদার মনে করে। তারাই যেন সর্বেসর্বা।’ ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ভিডিও ভাইরাল করার মামলায় সোনাগাজী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদনের শুনানিতে এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আহসান উল্লাহ ও সালমা সুলতানা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনও শুনানিতে অংশ নেন।
শুনানিতে মোয়াজ্জেমের আইনজীবী মো. আহসান উল্লাহ জামিনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, মামলাটি জামিনযোগ্য, সাজার পরিমাণও কম। তিনি অসুস্থ। একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় পেনশনের বিষয় রয়েছে। জামিন দিলে তো তিনি পালিয়ে যাবেন না।
জবাবে আদালত বলেন, তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ গুরুতর। তখন আইনজীবী বলেন, ‘তিনি বয়স্ক ব্যক্তি। কানেও কম শোনেন।’ আদালত বলেন, ‘কানে কম শুনলে ওসি থাকে কী করে?’
আইনজীবী আহসান উল্লাহ মামলার বাদী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে মন্তব্য করলে আদালত বলেন, ‘সাংবাদিকরা যদি শুরু থেকেই এ ঘটনার পেছনে লেগে থাকতো, তাহলে এ ঘটনা (নুসরাতের মৃত্যু) ঘটতো না। সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। বাদী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনও সমাজের দর্পণ।’
জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তিনি (মোয়াজ্জেম) ভিডিও করলেন, তা ভাইরাল হলো। তাকে জামিন দিলে জনমনে কী বার্তা যাবে? যদি তিনি অসুস্থ তাহলে কারা কর্তৃপক্ষ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিজন সেল আছে।’
মাহবুবে আলম বলেন, ‘পুলিশ অফিসারদের এমন দায়িত্বহীন কাজ আগে দেখিনি। মেয়েটিকে (নুসরাত) যেসব প্রশ্ন করেছেন তা শোনা যায়?’
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘কিছু কিছু ওসি ডিসি নিজেদেরকে জমিদার মনে করে, সবাই কিন্তু না। কিছু কিছু এমন আছে। অনেক দেশেই এমন আছে, তবে আমাদের দেশে বেশি। মেয়েটি (নুসরাত) থানায় অভিযোগ করতে গেল। এজাহারের জন্য লিখিত বক্তব্য দিতে বললেই হতো। এসব প্রশ্নের কোন প্রয়োজন ছিল?’
মাহবুবে আলম বলেন, ‘একেবারেই দায়িত্বহীনতার কাজ করেছেন।’ আদালত বলেন, ‘ঘটনা শুনে তার সহানুভূতি দেখানো উচিত ছিল। তখন যদি মেয়েটিকে নিরাপত্তা দেওয়া হতো তাহলে এ ঘটনা এতদূর এগুতো না।’
এরপর আদালত জামিন আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।
গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তার মা সোনাগাজী থানায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। এ ঘটনায় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নুসরাতের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এ জবানবন্দি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ওসির কাছে দেওয়া জবানবন্দি ভাইরাল হওয়ায় গত ১৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। ২৭ মে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ২০ দিন আত্মগোপনে থাকার পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ১৬ জুন গ্রেফতার হন সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।