কালীগঞ্জে সরকারি স্কুলের জায়গায় এলজিইডির সড়ক নির্মাণ
1 min readসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা ও এলাকার মানুষের খেলার মাঠের মাঝ দিয়ে একটি পাঁকা সড়ক নির্মান করছেন এলজিইডি। এলাকার মানুষের চলার পথের দুরত্ব ঘোচাতে এই সড়ক নির্মান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ওই দপ্তরের স্থানিয় কর্মকর্তারা। আর স্থানিয়রা বিষয়টি নিয়ে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হলেও অদৃশ্য ভয়ের কারণে কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না।তারা বলছেন, যে স্থান দিয়ে সড়কটি নির্মান করা হচ্ছে তার দেড় কিলো মিটারের মধ্যে দুইটি পিচঢালা পাঁকা সড়ক রয়েছে। তা সত্বেও দুরত্ব ঘোচানোর অজুহাতে এই সড়ক নির্মান কোনো ভাবেই ঠিক হচ্ছে না। সড়কটি নির্মান হলে এলাকার মানুষের একমাত্র খেলার মাঠটি চিরদিনের মতো হারিয়ে যাবে। বে-দখলে চলে যাবে স্কুলের জায়গা।
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার তালিয়ান গ্রামে রয়েছে তালিয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৪২ শতক জমির উপর এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। ভবন আছে দুইটি। ১০৮ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত পড়ালেখা করে। ৪ জন শিক্ষক রয়েছেন বিদ্যালয়টিতে।
এলাকাবাসি জানান, বিদ্যালয়ের সামনের স্থানটি অত্রাঞ্চলের একমাত্র খেলার মাঠ। ২ নম্বর জামাল ইউনিয়নের একমাত্র খেলার মাঠ এটি। এই মাঠকে কেন্দ্র করে তালিয়ান গ্রামে গড়ে উঠেছে শাপলা স্পোটিং ক্লাব। গ্রামের ক্রিড়ামোদী ছেলেরা এই ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফুটবল, ক্রিকেট থেকে শুরু করে নানা খেলাধুলা করে থাকে। গ্রামের মেয়েরাও এই মাঠে নানা খেলাধুলা করেন। তাছাড়া স্কুলের বাচ্চারাও স্কুল চলাকালে এই মাঠেই ছুটাছুটি করে।মাঠে সারিবদ্ধ ভাবে দাড়িয়ে বাচ্চারা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। গ্রামের বড় কোনো অনুষ্ঠান হলেই এই মাঠ ব্যবহার হয়। সেই মাঠ হঠাৎ করে খুড়ে তার উপর দিয়ে পাঁকা সড়ক নির্মান দেখে তারা হতবাক হয়েছেন। শাপলা স্পোটিং ক্লাবের সদস্য রনি মোহাম্মদ জানান, গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রথমএই খেলার মাঠটি খোড়া হয়। তারা জানতে পারেন এর মাঝ দিয়ে সড়ক হবে। এই শুনে প্রতিবাদ করেছিলেন, কিন্তু তাদের প্রতিবাদ শোনা হয়নি। এক প্রকার জোর করেই সড়ক নির্মান করা হচ্ছে।
সরেজমিনে ওই মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ১২ ফুট চওড়া ইট বিছানো (এইচ.বি.বি) পাঁকা সড়ক নির্মান কাজ চলছে। তালিয়ান কালীবাড়ি মোড় থেকে স্কুল মাঠ হয়ে রামচন্দ্রপুর ফুটব্রীজ পর্যন্ত এক কিলোমিটারের বেশি এই সড়ক নির্মান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্কুলের মাঠে গর্ত খোড়া হয়েছে। ফেলা হয়েছে ইট আর বালি। স্থানিয়রা জানান, খেলার মাঠটি আনুমানিক ১৮০ ফুট দৈর্ঘ্য আর ১ শত ফুট প্রস্তÍ। মাঠটি উত্তর-দক্ষিন লম্বা। উত্তরে স্কুল ভবন, আর দক্ষিনে বেগবতি নদী। এই মাঠের মাঝ দিয়ে নির্মান করা হচ্ছে সড়কটি। যে স্থানে সড়ক নির্মান হচ্ছে তার উত্তরে ১০৪ ফুট আর দক্ষিনে ৭৬ ফুট খোলা মাঠ। মাঝ দিয়ে চলছে ইট বেছানো কাজ।এলাকাবাসি বলছেন, তালিয়ান গ্রামের পূর্ব পাশের নাটোপাড়া গ্রামে যাওয়ার জন্য রামচন্দ্রপুর থেকে একটি চিপঢালা সড়ক রয়েছে। আর পশ্চিমে তালিয়ার গ্রামের কিছু অংশের মানুষের চলাচলের জন্য কোলাবাজার থেকে নারিকেলবাড়িয়া অভিমূখে আরেকটি সড়ক রয়েছে। তালিয়ান গ্রামের পূর্ব পাশের অধেঁক মানুষ রামচন্দ্রপুর সড়কে আর পশ্চিমের অর্ধেঁক চলাচল কলে কোলাবাজার সড়ক দিয়ে। গ্রামটির মাঝে দেড় কিলোমিটারের কিছু কম কাঁচা সড়ক রয়েছে। এটি পাঁকা হলে গ্রামের মানুষ আড়াআড়ি চলতে পারবে। যে কারনে সড়কটি নির্মান করা হচ্ছে।এলজিইডি’র কালীগঞ্জ উপজেলা অফিসে খোজ নিয়ে জানাগেছে, তালিয়ান কালীবাড়ি মোড় থেকে রামচন্দ্রপুর ফুট ব্রীজ সড়ক নির্মান এই প্রকল্পে বরাদ্ধ ৪১ লাখ ৮০ হাজার ৩৩৬ টাকা। ১৪৬৫ মিটিার সড়কে ইট বিছানো কাজ চলছে। জনৈক নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার এই কাজের ঠিকাদার। কাজ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আজিজুর রহমান জানান, সড়কটি নির্মানের পূর্বে তিনিই নকশা তৈরী করেন। সে সময় খেলার মাঠের মাঝ দিয়ে পাঁকা সড়ক করা যাবে না বলে জানালে স্থানিয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেন কাজ করতে বলেন। চেয়ারম্যান তাকে জানান, বিষয়টি নিয়ে কোনো ঝামেলা হবে না। তার অনুরোধে ওই স্থান দিয়ে সড়ক নির্মান নকশা করেছেন। তিনি অবশ্য বলেন, মাঠের দক্ষিন পাশ দিয়ে একটু ঘুরিয়ে নিলে নেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু পাশে নদী থাকায় সড়ক ধসে পড়ার আশংকায় সেটা করা হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান জানান, জায়গাটি স্কুলের। গ্রামের লোকজনের চলাচলের জন্য সড়ক নির্মান করা হচ্ছে, যে কারনে তিনি প্রতিবাদ করতে পারেননি। তাছাড়া তাদের বলা হয়েছে মাঠ সমান করে সড়ক নির্মান হলে কোনো সমস্যা হবে না। প্রয়োজন সড়কের উপর সবুজ ঘাস তৈরীর ব্যবস্থা করা হবে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান জানান, গ্রামের মানুষের প্রয়োজনে সড়ক হচ্ছে। এই স্থান দিয়ে ছাড়া বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করতে না পারায় তারা প্রতিবাদ করেননি।
বিষয়টি নিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সালমা বেগম জানান, বিষয়টি প্রধান শিক্ষক তাকে অবহিত করেনি। এখন জানার পর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আতাউর রহমান জানান, এটা খুবই দুঃখজনক। কোনো ভাবেই এই সড়ক নির্মান তারা করতে পারেন না। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ছাদেকুর রহমান জানান, কোনো ভাবেই খেলার মাঠের মাঝ দিয়ে পাঁকা সড়ক হতে পারে না। তাছাড়া জায়গাটি স্কুলের। বিষয়টি তিনি দেখছেন বলে জানান।