Fri. Dec 20th, 2024

ঝিনাইদহ নিউজ

সবার আগে সর্বশেষ

ঝিনাইদহ হিসাবরক্ষণ অফিসে পার্সেন্টেজ ছাড়া বিল ছাড় হয় না

1 min read

download

ঝিনাইদহ জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে প্রকাশ্যে ঘুষের হাট বসছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের অধীন সদর উপজেলার মধুপুর বালিকা শিশু পরিবারের দুই নারী কর্মচারী তাদের শিকারে পরিণত হয়েছেন। এরা হলেন শিশু পরিবারের কারিগরি প্রশিক্ষক মাকসুদা খাতুন ও ডালিয়া আক্তার। ২০০৫ সালের ২ অক্টোবর উন্নয়ন খাতে যোগদান করেন তারা। থোক বরাদ্দ থেকে বেতন হতো তাদের। এতে কোনো মাসে বেতন পান, কোনো মাসে বেতন পান না। ১ জুলাই ২০০৭ সালে রাজস্ব খাতে পদায়ন করা হয় তাদের। এতদিনের কষ্টের অবসান হবে এমনটি ভাবছিলেন তারা। কিন্তু হয়েছে উল্টো। ঝিনাইদহ জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস তাদের কাছে বেতনের অর্ধেক টাকা ঘুষ দাবি করে বসেন। বেতন তুলতে বাধ্য হয়ে রাজি হন তারা। ৯ মাসের বেতন-ভাতাদি ও ৮ বছরের বেতনের বকেয়া ভাতাসহ মোট ৯ লাখ ৪১ হাজার ৮২৬ টাকা পাওনা হয় তাদের। ১৭ এপ্রিল বিলের জন্য আবেদন করা হয় স্থানীয় হিসাবরক্ষণ অফিসে। জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর আকরামুজ্জামান ওরফে আকরাম। তার কাছেই সব কাজ। পাওনা টাকার অর্ধেকই ঘুষ হিসেবে প্রদান করতে হবে, নইলে চেক প্রদান করা হবে না। চেক থেকে টাকা তুলে দেয়া হবে এমন অনুরোধ করা হয়। রাজি না হওয়ায় অডিটর আকরামের পা ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন মাকসুদা খাতুন ও ডালিয়া আক্তার। এতেও মন গলে না তার। চেক নেয়ার আগেই অগ্রিম টাকা দিতেই হবে, নইলে সার্ভিস বইয়ে ডিও স্বাক্ষর করবেন না। এসময় গলা থেকে স্বর্ণের চেন খুলে দিতে চান তারা। এ পর্যায়ে চেক দেয়ার পরে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘুষের অর্ধেক টাকা দিয়ে দেবেন মর্মে অঙ্গীকার করেন মাকসুদা ও ডালিয়া। এর মাঝে বার বার টাকার কথা মনে করিয়ে দেন অডিটর আকরাম। ১৮ এপ্রিল বেলা ১২টার দিকে এজির ৬টি চেকে ৯ লাখ ৪১ হাজার ৮২৬ টাকা প্রদান করা হয় তাদের। কিন্তু ঘুষের টাকা না দেয়া পর্যন্ত দু’জনের সার্ভিস বই আটকে রাখা হয়। সোনালী ব্যাংকের চেকগুলো জমা দেয়া হয়। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হল। ফোনে বার বার টাকার জন্য তাগাদা দিতে থাকেন আকরাম। চেক ব্যাংকে জমা হলেও তা ক্যাশ করতে দেয়া হবে না বলেও হুমকি দেয়া হয়। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে টাকা না দিলে সার্ভিস বই দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন আকরাম। বিষয়টি আগে থেকেই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখে যুগান্তরের অনুসন্ধান বিভাগ। গোপন ক্যামেরাসহ একাধিক মোবাইল ফোনে ধারণ করা হয় তাদের কথোপকথন। মঙ্গলবার বিকালে সব প্রমাণসহ স্থানীয় হিসাবরক্ষণ অফিসে হাজির হলে জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. রেজাউল ইসলাম হকচকিয়ে পড়েন এবং তখন অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। ভিকটিম ডালিয়া ও মাকসুদাকে ফোনে ডাকেন তিনি। তারা দু’জন সেখানে হাজির হন। তাদের দেখে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর আকরাম। মুখোমুখি রেকর্ড করা কথপোকথন শোনেন জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। এর পর অভিযোগ স্বীকার করেন অডিটর আকরাম। ডালিয়া ও মাসুদার লুকিয়ে রাখা সার্ভিস বই এজির সুপার হাসানের কক্ষের একটি ড্রয়ার থেকে বের করা হয়। তখনও জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার স্বাক্ষর করা হয়নি। এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতেই স্বাক্ষর করে দেন তিনি। অভিযোগকারীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে দাবি করা ঘুষের টাকা দিতে হবে না, এমন কথাও বলে দেন সুপার হাসান। তবে অডিটর আকরাম বলেন, ডালিয়া ও মাকসুদা ইচ্ছে করে মোট টাকার অর্ধেক ঘুষ হিসেবে দিতে চেয়েছিলেন। এখন দাবি করা সেই টাকা দিতে হবে না বলেও বলেন তিনি। সব শেষ রাত ৭টার দিকে জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিজেকে ভালো মানুষ দাবি করে যুগান্তরকে বলেন, এই অফিসে বিল নিতে কাউকে ঘুষ দিতে হয় না। তার এ কথার পাল্টা অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। তারা বলেন, ঘুষ ছাড়া এ অফিসের বিল ছাড় করা অসম্ভব। জেলা পর্যায়ের বড় বড় কর্মকর্তাকেও পার্সেন্টেস দিয়ে বিল নিতে হয় বলে জানান তারা। এরিয়া বিল, শ্রান্তি বিনোদন, বকেয়া বেতন ছাড় করতে ঘুষ দিতেই হবে। নইলে নানা অজুহাত খাঁড়া করে বিল আটকে দেয়ার শত শত নজির রয়েছে অফিসটিতে।

সূত্র- যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *