বিশ্বাস করবো কাকে? পরিবার নাকি প্রশাসনকে?
1 min readগত ২৪ আগস্ট গাজীপুরের টঙ্গী থেকে জেএমবি সদস্য হিসেবে ৫জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। র্যাব-১ এর উপ-অধিনায়ক মেজর আজম সাংবাদিকদের বলেন, টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে অভিযান চালিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের জেএমবির ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার রাশেদুজ্জামান রোজ, জেএমবি সদস্য শাহাবুদ্দিন ও আহালে হাদিসের নেতা আবদুল হাইকে আটক করা হয়।
সেদিন র্যাব যাদের গ্রেফতার দেখিয়েছিল, তাদের মধ্যে ঝিনাইদহের রয়েছেন আবদুল হাই ও রাশেদুজ্জামান রোজ নামের দুজন । তাদের পরিবার সদস্যরা দাবি করছেন, অনেক আগেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে এদের উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরিবারের দাবি, গত ১৩ জুলাই তুলে নিয়ে যাওয়া হয় কালীগঞ্জের ষাটবাড়িয়া গ্রামের আশরাফুল আলমের একমাত্র ছেলে আবদুল হাইকে (৩৫)। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে বাড়িতে হোমিও চিকিৎসা দিতেন। পাশাপাশি বাড়ির পাশের মসজিদে ইমামতি করতেন।
আবদুল হাই এর স্ত্রী লিমা খাতুন বলেন, ‘স্বামীকে অনেক জায়গায় খুঁজেছি। কিন্তু পাইনি। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে। অবশেষে ৪১ দিন পর বুধবার (২৪ আগস্ট) বিভিন্ন টিভিতে আমার স্বামীকে আটকের কথা জানতে পারি।’
লিমা খাতুন অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে তাহলে ১৩ জুলাই কারা তুলে নিয়েছিল?
অপর দিকে ছেলে নিখোঁজের পর ঝিনাইদহ বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি ও জনতা ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা খয়বার রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তার ছেলে রাশেদুজ্জামান রোজকে হলিধানী বাজার থেকে গত ২ জুলাই তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। এরপর র্যাব তার ঢাকার বাসা থেকে রোজের ছবি ও মোবাইল নম্বর নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে গত ৩ জুলাই ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি জিডি করেছিলেন খয়বার রহমান।
সে সময় তিনি আরো বলেন, রোজ কানাডায় পড়ালেখা করে সেখানে চাকরি করতো। এরপর সে বাড়ি ফিরে সদর উপজেলার হলিধানী বাজারে ব্যবসা শুরু করে।
পৃথক আরেকটি ঘটনায়, গত ১২ আগস্ট নিখোজের ৭ দিন পর ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুর পুলিশ হত্যা মামলার আসামী জামায়াত নেতা ইদ্রিস আলী ওরফে পান্নার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ বলছে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হতে পারে।
অথচ গত ০৪ আগস্ট মোটরসাইকেলযোগে শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর বাজারে যাওয়ার পথে তিনি নিখোঁজ হন বলে গত ৯ আগস্ট ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়। তিনি হরিণাকুন্ডুর রঘুনাথপুর গ্রামের হোসেন আলী আলীম মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন এবং রঘুনাথপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর ছিলেন। তিনি হরিণাকুন্ডুর রঘুনাথপুর গ্রামের কাওছার আলীর ছেলে।
এখন পর্যন্ত নিখোঁজের তালিকায় রয়েছেঃ
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পাগলাকানাই ইউনিয়নের কোরাপাড়া বটতলা এলাকার হোসেন আলী মোল্লার ছেলে যুবলীগ কর্মী জাহিদ। গত দুই মাস আগে ঐ বটতলাতেই অবস্থিত তার কর্মের স্থান একটি পলিথিন ফ্যাক্টরীর থেকে পুলিশ পরিচয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অভিযোগ তার পরিবরের।
ঝিনাইদহ শহরের উপশহরপাড়া পাবলিক হেলথ জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন ছোটকামারকুন্ডু গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে সোহল রানাকে গত প্রায় ৩মাস আগে পুলিশ পরিচয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর আজও কোন হদিস নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুস আলীর সন্ধানের দাবীতে মানবন্ধন করে এলাকাবাসী। ইউনুস আলীকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে এলাকাবাসী বলেন, গত ২৪ আগষ্ট রাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বিত্তিদেবী রাজনগর গ্রাম থেকে তাকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যওয়া হয়। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ রয়েছে। ইউনুস আলী কাঁচেরকোল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
সবমিলিয়ে জেলা ব্যাপি সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়েগেছে এমন ঘটনা ঘটেছে ১০ এর অধিক। কয়েকজনকে বিভিন্ন মামলায় আদালতে হাজির করা হয়েছে, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে খুজে পাওয়া গেছে তাদের মৃতদেহ। বন্দুক যুদ্ধো বা অজ্ঞাত সন্ত্রাসীর দ্বারা খুনের কথা বলা হলেও পরিবারের অভিযোগের আঙ্গুলটি রয়েগেছে প্রসাশনের দিকেই। এখন পর্যন্ত নিখোজো আছেন অনেকেই।
পরিস্থিতি যখন এমন ঘোলাটে তখন স্বাভাবিক ভাবেই জনমনে প্রশ্নটি এসে যায়, “বিশ্বাস করবো কাকে? পরিবার নাকি প্রশাসনকে?”
আল আমিন সজল,
ঝিনাইদহ।