ঔষধী গাছে সংসার, ঔষধী গাছেই ভরসা
1 min readমোহাম্মদ আলী খন্দকারের বয়স তখন ১৬। তরুণ বয়সে জটিল রোগে আক্রান্ত হন। বাবার অভাবের সংসারে ঠিকমত চিকিৎসা না করায় ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরিবারের সবাই তার সুস্থ্য হওয়ার আশা ছেড়ে দেন। এক পর্যায়ে মায়ের চেষ্টায় পার্শ¦বর্তী গ্রামের এক ভেষজ চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে আরোগ্য লাভ করেন। এরপর থেকে তার বিশ্বাস গাছ মানুষের পরম উপকারী বন্ধু। ঔষধী গাছের ক্ষমতাও অনেক। তখন থেকে প্রতিজ্ঞা করেন জীবনে বেঁচে থাকলে ঔষধী গাছের বাগান করবেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, ঔষধী গাছ দিয়ে একদিকে মানুষের উপকার করা যাবে, অন্যদিকে বিক্রি করে পয়সাও রোজগার হবে। অতীতের সেই পরিকল্পনা থেকেই বাড়ির পাশের একটি নার্সারী ও ঔষধী গাছের বাগান করেছেন। এখন বাগানের ঔষধী গাছে একদিকে এলাকাবাসী উপকৃত হচ্ছেন, অন্যদিকে ঔষধী গাছ ও ফলজ গাছের চারা বিক্রি করে গত ৩৪ বছর ধরে সংসার চালাচ্ছেন। ঔষধী গাছ পাগল এ বৃদ্ধের বাড়ি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের উপজেলার প্রত্যান্ত পল্লী এলাকার গ্রাম মহেশ্বরচাঁদায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, তার প্রায় ৪০ শতক একখন্ড জমির একপাশে রয়েছে মেহগনি, আম, লিচু, কড়াইসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের চারা। এ গাছের ভিতর দিয়ে রয়েছে ঔষধী গাছ কালমেঘী, সাদা ও কালো তুলসী, ইশেরমূল, শতমূলসহ বেশ কিছু ঔষধী গাছ। ব্যপক চাহিদা থাকায় চলতি বছর বাড়ির পাশের আরো দুইখন্ড পতিত সরকারী খাস জমিতে নতুন করে ঔষধী গাছের চাষ শুরু করেছেন। প্রতিবছর ফলজ ও ঔষধী গাছ বিক্রি করে যাবতীয় খরচ বাদে প্রায় ৮০ হাজার টাকা লাভ করেন। প্রতিবছর দেশের প্রথম সারির ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা এসে তার উৎপাদিত ওষুধ গাছ কিনে নিয়ে যায়।
বৃদ্ধ মোহম্মদ আলী খন্দকার জানান, বর্তমানে তার বয়স ৭৬ বছর। কৈশরে জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে গাছের কারনেই তার জীবন বেঁচেছে। ফলে তিনি গাছকে খুব গুরুত্ব দেন। বিগত ৩৪ বছর ধরে বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের চারার নার্সারীর পাশাপাশি ঔষধী বাগান করে সংসার চালাচ্ছেন। গত কয়েক বছর ঔষধী গাছের ব্যপক চাহিদা থাকায় তিনি আরো ১০ শতকের দুই খন্ড জমিতে তিনি ঔষধী গাছের চাষ করছেন।
অতীতের দিনগুলোর স্মৃতিচারন করে বৃদ্ধ এই গাছ পাগল খন্দকার বলেন, বাস্তব জীবনে চরম অভাবের সাথে তার দেখা হয়েছে। নিজের চাষযোগ্য জমি না থাকায় পরের বাড়িতে কামলার কাজ করে পরিবারের সদস্যদের দু’মুঠো খাবার জোগাড় করেছেন। কখনও কখনও পরিবারের লোকজনদের অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হয়েছে। কিন্তু ঔষুধী গাছের কারনে এখন তার সে দিন পাল্টে গেছে। ছেলেরাও তার বাবার কাজে সহযোগীতা করে থাকেন।
তিনি আরো জানান, পৃথিবীতে চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন অনেক এগিয়ে সেখানেও গাছের অবদান রয়েছে। গাছের ক্ষমতা অনেক। মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু গাছ। তিনি আরো বলেন, আশপাশের গ্রামের মানুষ অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হয়ে ঔষধী গাছের জন্য তার কাছে ছুটে আসেন। আর নিজের গ্রামের লোকজন তো আছেনই। এতে মানুষের উপকার করার সুযোগ পাচ্ছেন। পাঁচ ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। সন্তানদের সকলকে বিয়ে দিয়েছেন। তারা সকলেই পৃথক সংসার করছেন। ফলে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখন তিনি সাংসারিক চাপমুক্ত। ফলে অনেকটা মুক্তভাবেই ঔষধী গাছের চাষ করতে পারেন।
একই গ্রামের বাসিন্দা আদর্শ কৃষক হেলাল উদ্দীন জানান, বয়োবৃদ্ধ মোহম্মদ আলী খন্দকার তার গ্রামে ঔষধী গাছ পাগল হিসেবে পরিচিত। গ্রামের কেউ অসুস্থ হয়ে ঔষধী গাছের জন্য গেলে টাকা নেন না। বরং কোন গাছ কোন রোগের জন্য কিভাবে খেতে হবে তা তথ্য দিয়ে সাহায্য করে থাকেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, আলী খন্দকারের নার্সারী ও ঔষধী বাগান দেখেছেন। বৃদ্ধ বয়সে তিনি যেভাবে পরিশ্রম করেন বাগানটি দীর্ঘ সময় ধরে টিকিয়ে রেখে একদিকে নিজের সংসার চালাচ্ছেন অন্যদিকে ঔষধী গাছ দিয়ে মানুষের উপকার করছেন এ জন্য তিনি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
তারেক মাহমুদ, কালীগঞ্জ,