কৃষির উপকারী ‘বন বিড়াল’
1 min readদেখতে অবিকল আমাদের পোষা বিড়ালের মতো। তবে আকারে এক নয়। বনবিড়াল কিছুটা বড়। দৈহিক গঠন খানিকটা বৃহৎ বলেই বন্য পরিবেশে শিকারে সে নিজের অধিপত্য বজায় রেখে চলেছে।
শুধু তা-ই নয়, গ্রামগঞ্জ থেকেও প্রাকৃতিক জঙ্গল, জলাভূমিগুলো ধ্বংস হবার কারণেও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ওখানে বসবাসরত ছোট-মাঝারি আকারের প্রাণীরা।
বনবিড়ালও তার ব্যতিক্রম নয়। এরা কৃষি বান্ধব। কৃষির উপকার সাধন করে অতি নিভৃতে। এর ইংরেজি নাম Jungle Cat আর বৈজ্ঞানিক নাম Felis chaus। একে জংলিবিড়াল, খাগড়াবিড়াল প্রভৃতি নামেও অভিহিত করা হয়।
এরা নিশাচর। গাছে উপর উঠে রাতের আধারে এরা ছোট পাখি বা পাখির ডিম, ছানা প্রভৃতি শিকার করে খায়। এক লাফে কয়েক ফুট পৌঁছে যেতে পারে। দিনের বেলায় এরা লতাপাতাঘেরা বড় গাছের কোটরে ঘুমায় বা তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে। প্রজনন মৌসুমে গাছের কোটরে দু’ থেকে চারটি ছানা প্রসব করে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল খান বলেন, বনবিড়াল বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়। গৃহপালিত মুরগি, মুরগির ছানা, কবুতর প্রভৃতি এরা ধরে নিয়ে যায় বলে এই বনবিড়ালের প্রতি মানুষ অনেকটাই শত্রুভাবাপন্ন।
তিনি আরও বলেন, এর উল্লেখযোগ্য ব্যাপারটি হলো, বনবিড়ালের খাবারের বড় অংশই হচ্ছে ঘাসফড়িং জাতীয় বড় পোকা এবং ইঁদুর। যেগুলো আমাদের ক্ষেতখামারে থাকে এবং ফসলের ক্ষতিসাধন করে। তাই বনবিড়াল গৃহপালিত মুরগি-কবুতর ধরে নিয়ে খেয়ে যতটুকু ক্ষতি করে তার থেকে অনেক বেশি উপকার সাধন করে থাকে পার্শ্ববর্তী কৃষিজমিগুলোর।
মেছোবাঘ ও মেছো বিড়াল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকে মেছো বিড়ালকে ‘মেছো বাঘ’ বলে। আসলে ‘ফিসিং ক্যাট’ অর্থাৎ ‘মেছোবিড়াল’ একটু বড় সাইজের বলে এটি অনেকে মেছোবিড়াল না বলে ‘মেছোবাঘ’ বলে থাকে। ইংরেজিতে সবই ‘ক্যাট’। গৃহপালিত বিড়াল এবং বনবিড়াল দুটো ভিন্ন প্রজাতি। আমাদের দেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগারও ‘ক্যাট’ প্রজাতিভুক্ত।
জানা যায়, মানুষ প্রথম বিড়ালকে পোষ মানাতে শুরু করে প্রায় দশ হাজার বছর আগে। ‘ফেলিডি’ বিড়ালদের বৈজ্ঞানিক পরিবার। এ পরিবারের একেকটি সদস্যকে ‘ফেলিড’ বলে। প্রায় সব ফেলিডই মাংসাশী। এদের মধ্যে সাধারণ গৃহপালিত পোষা বিড়ালই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) বনবিড়ালকে ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্থ’ বলে তালিকাভুক্ত করেছে।