Sun. Dec 22nd, 2024

ঝিনাইদহ নিউজ

সবার আগে সর্বশেষ

গরুর গাড়ীর চাকা তৈরী শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী

1 min read

গরুর গাড়ীর চাকা তৈরী শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী

গরুর গাড়ীর চাকা তৈরী শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী
গরুর গাড়ীর চাকা তৈরী শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী

গরুর গাড়ীর চাকা তৈরীর বৃহত্তম জেলা হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে ঝিনাইদহের নাম। দেশের সর্বাধিক চাকা তৈরী হয় এ জেলাতে। ৩০ জেলা থেকে পায়কারি ব্যাবসায়ীরা চাকা কিনতে ঝিনাইদহে আসছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন চাকা উৎপাদনকারী কারখানা থেকে ট্রাক ভর্তি করে চাকা নিয়ে যান ক্রেতারা। শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছেন ।

চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের সমস্ত খরচ। এমনকি তাদের ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার খরচ যুগিয়ে যাচ্ছেন তারা। গাড়িগুলোর অন্যতম উপকরণ হলো কাঠের তৈরী চাকা। ঝিনাইদহের গাড়াগঞ্জে দেশের সর্বাধিক চাকা তৈরী হয়। এ চাকা যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছে তারা। কিন্তু সরকারি সুযোগ সুবিধার অভাব। সদর উপজেলার হাট গোপালপুর, আমতলী বাজার, হাটখোলা, মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে, শৈলকূপার ভাটই বাজার, গাড়াগঞ্জ বাজার, খুলুমবাড়ি, কুমিড়াদহ ও আবাইপুর বাজারে গড়ে উঠেছে একাধিক চাকা তৈরীর কারখানা।

তবে দেশের বৃহত্তর চাকা উৎপাদনকারী এলাকা হিসাবে পরিচিত গাড়াগঞ্জ বাজার এলাকা। বিভিন্ন এলাকার কৃষক ও গৃহস্থরা গরুর গাড়ির চাকার জন্য ছুটে আসেন এসব অঞ্চলে। সরেজমিনে গাড়াগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রধান সড়কের দু’ধারে অল্প সামান্য জায়গার উপর গড়ে উঠেছে ৮টি চাকা তৈরীর কারখানা। কারীগরসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি কর্মরত রয়েছেন এখানে। বংশানুক্রমে ব্রিটিশ আমল থেকেই এ পেশাটিকে আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন তারা। চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব কারিগররা এক পর্যায়ে শৈলকূপার গাড়াগঞ্জ এলাকাসহ ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় এসে কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে চাকা উৎপাদনের বৃহত্তর এলাকা হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে ঝিনাইদহ। গাড়াগঞ্জ বাজারের চাকা তৈরীর কারিগর আনছার আলী(৭০) জানান, তার বাপ দাদারাও চাকা তৈরীর পেশায় ছিলেন।

পিতার কাছেই এ পেশার হাতে খড়ি তার। পিতার সঙ্গে বাড়িতেই চাকা তৈরীর করতেন। কিন্তু সেখানে এর চাহিদা কম থাকায় কাজের খোঁজে প্রায় ২০ বছর আগে গাড়াগঞ্জ এলাকায় আসেন তিনি। একটি চাকাতে ১হাজার টাকা থেকে সাড়ে ১২’শ টাকার কাঠ লাগে। আর শ্রমিকের মজুরি ৩’শ টাকা। বিক্রি করা হয় ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পযন্ত। কোন যান্ত্রিক যন্ত্রপাতি নয়, শুধু হাতুড়, বাটাল, করাতের মাধ্যমে তৈরী করা হয় দৃষ্টিনন্দন এই চাকা।

একজন কারিগর একদিনে একটি চাকা তৈরী করতে পারে। তাতে প্রতিদিন গড়ে ৮শত থেকে এক হাজার টাকা আয় হয়। আরেক কারিগর ফিরোজ হোসেন জানান, বাবলা গাছের কাঠই এ চাকা তৈরীর একমাত্র উপাদান। চাকার মাঝের গোল অংশ (বেলন), ভেতরের লম্বা লম্বা কাঠ (প্যাকো) ও চওড়া কাঠের বৃত্ত (কৈঠা) বলা হয়। চাকার মহাজন গোলাম রব্বানী জানান, মাগুরা, আড়পাড়া, বারইচরা, পাবনা, পাংশা, রাজবাড়ি, কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা, যশোর, খুলনা, পটুয়াখালি,গোপালগঞ্জ ,নড়াইল,মানিকগঞ্জ,ফরিদপুরসহ ৩০ জেলা থেকে পায়কারি ব্যাবসায়ীরা ঝিনাইদহের বিভিন্ন চাকা উৎপাদনকারী কারখানা থেকে ট্রাক ভর্তি করে চাকা নিয়ে যান। এভাবেই প্রতিদিন উৎসব মুখোর পরিবেশে চাকা ক্রয় বিক্রয় হয় দেশের প্রধান চাকা উৎপাদনকারী এলাকাটিতে। চাকা তৈরীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারিগর জানান, অনেক সময় পুজির অভাবে বেশি মুল্যে বাকিতে গাছ কিনতে হয়।

সরকারি বে-সরকারি সহযোগিতাসহ ব্যাংক ঋণের সুবিধা পেলে কৃষিকাজের সঙ্গে সরাসরি স¤পৃক্ত এ চাকা শিল্প তথা ঐতিহ্যবাহী গরু মহিষের গাড়ি টিকে থাকবে। সেই সঙ্গে ভাগ্যের চাকাও ঘুরবে এ শিল্পের কারিগরদের বলে তারা জানান।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *