ঝিনাইদহে পোষ্ট অফিসের কর্মচারী কর্মকর্তাদের চলছে বেহালদশা
1 min readঝিনাইদহ নিউজ: সোনালী দিন আর নেই। ই-প্রযুক্তির ডানার ঝাপটায় বিপর্যয় নেমেছে ডাকঘরে। ছোট হয়ে আসছে ডাক বিভাগের পৃথিবী। অপাংক্তেয়-অচ্ছুত হয়ে পড়েছে এককালে মানুষের প্রাণভোমরা ডাকহরকরা’রা। স্মৃতির অলিন্দে ঠাঁই নিচ্ছে বাঙালির ঐতিহ্য চিঠি। ‘রানার ছুটেছে তাই ঝুম্ঝুম্ ঘণ্টা বাজছে রাতে-রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে। তবে এই দিনে তার ছোটাছুটির ব্যস্ততায় যতি পড়েছে। তাই সারা দেশের ন্যায় ভাঁটা পড়েছে ঝিনাইাদহ জেলার বিভিন্ন পোষ্ট অফিসের কর্মচারী কর্মকর্তাদের মঝে। তাদের যেন সময় আর কাটতে চায় না। হারিয়ে গেছে আবেগ-মমতায় ভরা চিঠির কাল। ডাকপিয়নদের অপেক্ষায় আর পথ চেয়ে থাকে না কেউ। মন ভাঙা আকুলতা নিয়ে আর কেউ বলে না- ‘চিঠি কেন আসে না, আর দেরি সয় না-ভুলেছো কি তুমি আমাকে, ভুলেছো কি নাম-ঠিকানা’। ধাবমান জীবনে চিঠি লেখার অবকাশ কোথায়। আর মানি অর্ডারে টাকা পাঠানো এখন ইতিহাস। মোবাইল, এসএমএস, ই-মেইল আর ফেসবুক, ভাইবার, ইমু, হোয়াটসআপ হাতে হাতে। এক নিমিষেই যুক্ত হওয়া যায় লাইভ কথোপকথনে। এখান গ্রাম আর গ্রাম থাকছে না, শহরের চেয়ে গ্রাম এখন কিন্তু খুব একটা পিছিয়ে নেই। সকল প্রকার সুবিধার পাশাপামি প্রযুক্তিক সুবিধাটাও পৌছে গেছে গ্রামের মানুষের কাছে। প্রিয়জন এবং আত্বিয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগে পিছিয়ে নেই গ্রাম বাংলার মানুষ। চিঠি পত্র আদান প্রদানের বদলে সবার ভরসা এখন নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তি। বাংলাদেশের অজোপাড়াগাঁওে পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করছে ই-মেইল জি-মেইল।
ফুরিয়ে গেছে চিঠির মান্ধাতা। চিঠি, টেলিগ্রাম সেবার প্রয়োজনও ফুরিয়েছে। সারা দেশের মতো ঝিনাইদহেও ডাক বিভাগ অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দিনের পর দিন বন্ধ থাকছে জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের ডাকঘরগুলো। বেশির ভাগ ডাকঘরে নেই কোনো নেই ডাকবাক্স। যা দুয়েকটা ডাকবাক্স আছে তা মরিচা ধরে অর্ধেক আছে আর অর্ধেক নাই এবং আবর্জনায় ভর্তি। জেলা এবং উপজেলা ডাকঘর ব্যতীত সবক’টিতেই এই নাজুক অবস্থা। একসময় ডাকঘরগুলো সবসময় মুখরিত থাকতো রানার কিংবা ডাক পিয়নের পদচারনায়। মানুষ ডাকঘরের সামনে অপেক্ষা করতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কারণ কখন যেন আসবে কাক্সিক্ষত চিঠি। কিন্তু ডাক বিভাগের সেই ঐতিহ্য এখন ফিকে হতে বসেছে। ঝিনাইদহ জেলায় মোট ১০৩টি ডাকঘর রয়েছে। এর মধ্যে জেলার প্রধান ও উপজেলা ডাকঘরসহ ৮টি সরকারি এবং অবিভাগীয় ৯৫টি। বেশির ভাগ ডাকঘরের পাকা বিল্ডিং, সোলার প্যানেল স্থাপন ও আসবাবপত্র নতুন করে তৈরি করা হলেও এসব ডাকঘরের নেই কোন দাপ্তরিক কাজকর্ম। ডাকঘরগুলো দিনের পর দিন থাকে বন্ধ, সেখানে নেই কোনো ডাকবাক্স। দু-একটি থাকলেও তাতে চিঠির পরিবর্তে স্থান পাচ্ছে বিড়ি-সিগারেটের প্যাকেট, ময়লা-আবর্জনায়। ডাষ্টবিন হিসাবে ব্যবহারকরা হচ্ছে এসব ডাকবাক্সগুলো।
প্রতিটি ডাকঘরে রয়েছে একজন ডাক পিয়ন ও একজন পোস্ট মাস্টার। মাসে একবারও এসব ডাকঘরগুলোতে রানার বা ডাক বিলিকারীর কোনো খোঁজই মেলেনা। অন্যদিকে সপ্তাহান্তরেও দেখা মেলেনা পোস্ট মাস্টারের। এরূপ করুণ অবস্থার কারণে ডাক বিভাগের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছেন মানুষ। এ অবস্থায় ডাক বিভাগের পুরাতন ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আধুনিকিকরণের দাবি জানানো হয়েছে। তবে জেলা ও উপজেলা ডাকঘরগুলো চালিয়ে যাচ্ছে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম। এখানে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। জেলার প্রধান ডাকঘর থেকে গড়ে প্রতিদিন ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ চিঠি এবং অনলাইনের মাধ্যমে টাকা-পয়সা আদান-প্রদান হয়। কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের পোষ্ট মাষ্টার শাহাজাহান জানান, আমাদেরকে ৪ হাজার ৪ মত টাকা সম্মানী ভাতা দেওয়া হয়।
যাতে করে আমাদের সংসার চলে না, ফলে বাধ্য হয়ে অন্য কাজ করতে হয়। জেলার প্রধান ডাকঘর সূত্রে জানাগেছে, ডাক বিভাগের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এগুলো তদারক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা ডাকঘরগুলো বেশ ভালো চলছে। কাজের পরিধিও বেড়েছে। শতাব্দীর ডিজিটাল এই যুগে অনেক কিছুরই আধুনিকিকায়ন করা হলেও ডাক বিভাগের খুব একটা উন্নতি ঘটেনি। সরকারি ডাক বিভাগের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংস্থা কুরিয়ার সার্ভিস নামে যে চিঠিপত্র ও টাকা-পয়সা আদান-প্রদানের মাধ্যম চালু করেছে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছে। এসব কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অতি তাড়াতাড়ি ও সঠিক সময়ে সেবা পাওয়ায় মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছে। সরকারি ডাকবিভাগ পুরনো ধ্যান-ধারণা বাদ দিয়ে, আধুনিকীকায়নের মাধ্যমে মানুষের কাছে ডাক বিভাগকে আবারো জনপ্রিয় করার দাবী জানান এলাকাবাসী। ডাক বিভাগ একটি পুরাতন ঐতিহ্য, তাই এটাকে ধরে না রাখলে আগামি প্রজন্ম ডাকঘর, টিঠি, রানার, পিওন, ডাকহরকরা এবং পোষ্ট মাষ্টার কি এবং কাকে বলে কিছুই চিনতে পারবে না। ডাক বিভাগের এ সকল সমস্যা সমাধানে এ জেলার মানুষ বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সূ-দৃষ্টি কামনা করেছেন।