ঝিনাইদহে ফুল চাষীরা মাঠের ফুল ফেলে দিচ্ছে মাঠেই
1 min readঝিনাইদহ নিউজ:
ফুল নিয়ে বিপাকে পড়েছে ঝিনাইদহের ফুল চাষিরা। ফুল এখন ধুলোয় লুটপুটি খাচ্ছে, পড়ে থাকছে ঝোপ-ঝাড়ে, বাগানে । এদিকে কেন ফুল ফেলে দিচ্ছে কৃষকেরা সে খবর জানা নেই কৃষি বিভাগের।
ফুল চাষীরা তাদের ফুল তুলে ক্ষেতের সারিগুলোতে আবার কখনো ঝোপঝাড়ে ফেলে দিচ্ছে বা কখনো গাছেই ফুটে থাকছে । মাঠের পর মাঠ ফুল বাগানের এই করুণ দৃশ্য দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুল উৎপাদনকারী এলাকা ঝিনাইদহের । ফুল চাষীরা বলছে পুরো রমজান মাস জুড়ে তেমন কোন অনুষ্ঠান, ইভেন্ট না থাকায় দীর্ঘ এ সময়টাতে ফুলের কেনা-বেঁচা প্রায় বন্ধ হয়ে যায় । ফলে বাগানজুড়ে থাকা গাঁদা, রজনীগন্ধ্যা সহ বিভিন্ন প্রকার নামি-দামি তরতাজা সব ফুল তুলে ফেলে দিতে হয় । এক মাসে কমপক্ষে ৪টি চালান বিক্রি করতে না পারায় ৫০হাজার থেকে লাখ টাকা ক্ষতি হয় কৃষকদের, তাদের দাবি ফুল সংরক্ষণ বা হিমাগারের । এদিকে কেন ফুল ফেলে দিচ্ছে কৃষকেরা সে খবর জানা নেই কৃষি বিভাগের ।
যশোরের পরেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুল উৎপাদনকারী এলাকা হিসাবে পরিচিত ঝিনাইদহ । জেলার কালীগঞ্জ, সদর সহ উপজেলাগুলোতে ৪শ হেক্টরের বেশী জমিতে গোলাপ,গাঁদা, রজনীগদ্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা সহ নানা দেশী-বিদেশী ফুলের চাষ হচ্ছে । ফুল চাষ লাভজনক তাই ঝিনাইদহের মাঠে প্রায় বছর জুড়ে ব্যস্ত সময় কাটে ফুলচাষীদের তবে এই সময়টার ব্যস্ততা ভিন্ন কারণে । মাঠের বাগান থেকে সব ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছে ফুলবাগানের সারিগুলোতেই কখনো বা ঝোপঝাড়ে, রাস্তার ধারে । বিয়ে-অনুষ্ঠানাদি বা ইভেন্ট না থাকায় দাম নেই ফুলের, তাই রমজান মাসের এই সময়ে বেঁচা-কেনা থাকে প্রায় শূণ্যের কোঠায় থাকে বলে জানান সদর উপজেলার উদয়পুর গ্রামের ফুলচাষী বিল্লাল হোসেন ও মহাসিন হোসেন। গাঁদা ফুলের ঝোপা ২’শ থেকে আড়াই’শ টাকা পর্যন্ত ঝোপা বিক্রি হলেও এখন তা ২০/২৫ টাকা ঝোপা আর রজনীগন্ধার ১টি স্টিক ৫টাকা পর্যন্ত দাম উঠলেও এখন তা যাচ্ছে চারআনা দরে । বর্তমান সময়ে যে ফুলের চাষ হচ্ছে তাকে বলা হয় গরম মৌসুমের ফুল । ৫ থেকে ৬মাস পর্যন্ত এ ফুল পাওয়া যায় বাগান থেকে । ১বিঘা জমিতে চাষ করতে গাঁদা ও রজনী গন্ধা তে খরচ হয় প্রায় ২৫/ ২৬ হাজার টাকা, আর বিক্রি করা যায় প্রায় লাখ টাকা । তবে রমজানের এই সময়টাতে ফুলের দাম নেমে আসে সর্বনিন্ম পর্যায়ে। তাও বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ফুল তুলে ফেলে দিতে বাধ্য হয় কৃষকেরা । কারণ শ্রমিক খরচ করে ফুল তুলে, ঝোপা গেঁথে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত আয়ের চেয়ে ব্যায় বেশী হয়ে দাঁড়ায় এ সময়টাতে । কালীগঞ্জের ফুলচাষী মুকুল জানান, তার আড়াই বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা ও গাঁদা ফুলের চাষ আছে । যে ফুলের স্টিক ৫ টাকা দরে বিক্রি করত এখন তা ১টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে না, তিনি বলেন ১টাকা দরে রজনীগন্ধার স্টিক বিক্রি হলেও ২লাখ স্টিক ২ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারতেন কিন্তু বর্তমানে তা চারআনা দরেও বিক্রি হচ্ছে না । এমন পরিস্থিতিতে সংরক্ষণাগার বা হিমাগারের দাবি ফুল চাষীদের ।
এদিকে কেন ফুল ফেলে দিচ্ছে কৃষকেরা সে খবর জানা নেই কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের । তবে এভাবে ফুল ফেলে দেয়ার কথা শুনে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ঝিনাইদহের উপ-পরিচালক জি,এম আব্দুর রউফ বলেন কৃষকেরা যেন নিরুৎসাহিত না হয়ে পড়ে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন । কর্মকর্তারা বলছেন পরিকল্পিত ভাবে ফুলের চাষ করতে হবে আর ফুল সংরক্ষণ করতে হলে বিশেষায়িত হিমাগারের জন্য সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ নিতে হবে ।