ঝিনাইদহে শিয়া নেতা, পুরোহিত, সেবায়েত, হোমিও ডাক্তার হত্যা মামলার চার্জশিট আজো হয়নি”
গত বছর ঝিনাইদহে পুরোহিত, সেবায়েত, শিয়া সম্প্রদায়ের নেতা ও খৃষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হোমিও ডাক্তারের চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার চার্জশিট আজও হয়নি। পুলিশ বলছে এসব মামলায় গ্রেফতারকৃত ৪ আসামি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। জবানবন্দীতে আর কারা এসব হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত এবং কিভাবে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটানো হয়েছে তার বিবরণ আছে। আসামিরাও সনাক্ত হয়েছে।
গত বছরের ১ জুলাই ভোর ৫টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামের রাধামদন গোপাল মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস গোসাই বাবাজী প্রতিদিনের মত মঠের সামনের বাগান থেকে পূজার ফুল তুলছিলেন। এসময় মোটরসাইকেলে করে এসে দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের নামে মামলা করা হয়। পুলিশ শৈলকুপার ভাটই অঞ্চলের শিবিরের সভাপতি শাহিনকে আটক করে। সে আদালতে এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করে। অন্য কারা এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত এবং কিভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় তার বর্ণনা আছে জবানবন্দীতে। অন্যরা পলাতক রয়েছে।
৭ জুন সকালে করাতিপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে নলডাঙ্গা মন্দিরে পূজা করতে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধ পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী। পথিমধ্যে নির্জন মাঠের মধ্যে মোটরসাইকেলে আসা সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। সদর থানায় মামলা করেন নিহতের ছেলে অরুন কুমার গাঙ্গুলী। পুলিশ ঝিনাইদহ পৌর শিবিরের ২নং ওয়ার্ড কমিটির সম্পাদক এনামুল হককে গ্রেফতার করে। সে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়। আর কারা এ হত্যায় জড়িত এবং কিভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় তার বিবরণ আছে জবানবন্দীতে। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিবিরের সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান ও পৌর শিবিরের আইন বিষয়ক সম্পাদক সহিদ আল মাহমুদ পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। পুলিশের এক সূত্র জানায়, এ মামলায় জড়িত আরো ৩ জনের নাম জানা গেছে। তারা ঘটনার আগে থেকেই নিখোঁজ রয়েছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হাফেজ আব্দুর রাজ্জাক নামে শিয়া সম্প্রদায়ের নেতা হোমিও ডাক্তারকে কুপিয়ে হত্যা করে করে দুর্বৃত্তরা। কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই। পুলিশ মোঃ সবুজ খান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে। সে আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়। আর কারা হত্যাকাণ্ড ঘটায় তার বিবরণ আছে জবানবন্দীতে। ঘটনায় জড়িত আবুজার গিফারি ও শামীমের গুলিবিদ্ধ লাশ যশোর এলাকায় ও মহিউদ্দিন সোহানের লাশ চুয়াডাঙ্গা এলাকায় পাওয়া যায়। পুলিশ জানায়, এ হত্যাকাণ্ড ৮ জনে ঘটায়। মূল হোতাসহ বাকি ৪ জন পলাতক আছে।
৭ জানুয়ারি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেলেখাল বাজারে নিজ চেম্বারে দিনে দুপুরে খুন হন খৃষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হোমিও ডাক্তার ছমির উদ্দিন খাঁজা। পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডে কারা ঘটিয়েছিল তা সনাক্ত করেছে বলে জানায়। বিভিন্ন সময়ে এ মামলার আসামি ফারুক, আবু হোবাইরা, আনিস, শহিদ ও জহুরুল নিহত হয়। বাকিরা পলাতক আছে।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান জানান, এ ৪টি মামলা পুলিশ হেড কোয়ার্টারের মনিটরিং সেলের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছে। আসামীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিভিন্ন সময়ে নিহত হয়েছে। বাকিরা পলাতক আছে। তাদের ধরতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে। চার্জশিট দাখিল প্রক্রিয়াধীন আছে।