নগন্য নাগরকি ভাবনা
1 min read
হতাশ হয়ে সবার মতো আমিও এসব ভাবতে পারছি না, এত সুন্দর চেহারা, শিক্ষা-দিক্ষায়, প্রযুক্তিতে কত এগিয়ে, আর এমন তারুন্যদীপ্ত ছেলেরা এ কোন পথে চলে গেছে! নিজের জীবন,যৌবন, মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশী সব, সব কিছু তুচ্ছ করে মৃত্যু কে কত সহজেই আলিঙ্গন করছে! যে মৃত্যু কে মানুষ সবচেয়ে বেশী ভয় পায়, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকতে রাজি কিন্তু মরতে চাই না । আসলে সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে কেউ যেতে চাই না। এমনকি যারা কথিত ধর্মীয় নেতা, যারা কিনা বলে মরলে শহীদ বাঁচলে গাজি ( ধর্মীয় এই বাক্যটির অপব্যাখ্যা করা হয় এখন)তারাও । স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা না করে ধর্মীয় কিছু উক্তির ভ্রান্ত যুক্তি দেয়া হচ্ছে। আর এই সব তরুণ এভাবে নিজেরা রণক্ষেত্র বানিয়ে নিজের জীবন শেষ করে দিচ্ছে ! অসম্ভ মেধাবী এসব ছেলেদের জীবন, ধর্ম, দর্শন সম্পর্কে ভ্রান্ত পথ দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে, তারা সেসব সম্পর্কে কোন ধরণের বিচার বিশ্লেষন, ভাল-মন্দ বিবেচনা না করে উইপোকার মতো উড়ছে আর মরছে! কখনো অর্থ দিয়ে মাতিয়ে রাখা হচ্ছে।
ধর্মের শিয়া-সুন্নি সহ বিভিন্ন দেশের নানা গোত্র, মতবাদ কে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা দেশগুলি শান্তির ধর্ম ইসলাম কে বিকৃত করতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে। তারা ইতিহাস, ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো কে নিজেদের আয়ত্ব করে চলেছে। ইরাক, ইরান, আফগানস্থান, মিশর, লিবিয়া, পাকিস্থান সহ মধ্য প্রাচ্যর দেশগুলিকে শেষ করে দেয়ার মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করছে। ইসলাম ধর্ম এখন যেন কাঠগড়ায় দাড়িঁয়ে ! ইসলাম ধর্ম চির আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক আর সেই ধর্ম কে বিকৃত পথে ঠেলে দেয়ার বিরোধিতা না করে আজকের তরুণ, মেধাবী ছেলেরা পশ্চিমা নীলনক্সায় গা ভাসিয়ে দিচ্ছে।
পশ্চিমারা নজর দিয়েছে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের দিকে । স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের নিজস্বতা বিকিয়ে দেয়ার মিশনে নেমেছে তারা। তারই এক বিষ্ফােরণ গুলশান ট্রাজেডি। আমাদের দেশ কে আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বরাবর বলা হচ্ছে দেশে পশ্চিমাদের সৃষ্টি আইএস জঙ্গী সংগঠন নেই। এটা কিন্তু জলন্ত সত্য । বিদেশী জঙ্গী আইএস, তালেবানরা কিন্তু দেশে এসে এমন রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠছে না তবু নাম হচ্ছে বা বলতে বাধ্য করার অপচেষ্টা চলছে বাংলাদেশে আইএস, তালেবান রয়েছে। প্রশ্ন হতে পারে তাহলে কারা, কেন দেশে মানুষ হত্যার খেলা খেলছে ? উত্তর হলো ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে আমাদের দেশের তরুণরাই মেতে উঠেছে খুণোখুনীতে। প্ররোচনা, প্রলোভনে ভিনদেশী জঙ্গী মতাদর্শী হচ্ছে কেউ কেউ আর এই অসহায় রক্তপাত, হত্যা বন্ধ করতে রাষ্ট্র, সরকার, জনগনকেই সামনে দাঁড়াতে হবে।
দেশের যুব সমাজ, ধর্মাচার, তরুণরা কোথায় কি করছে, কেন করছে। বিশেষ করে সরকার কে এসব ব্যাপারে সচেতন হতে হবে, ভাবতে হবে। প্রশাসনের সকল বাহিনী কে তীখ্ন নজরদারী থাকতে হবে। প্রকৃত ধর্মীয় নেতাদের দায়িত্ব নিতে হবে ইসলামের সঠিক পথ দেখিয়ে দিতে। আর পরিবার প্রধান মানে বাবা-মা, অভিভাবকদের দৃষ্টি দিতে হবে তার ছেলে-মেয়ে কোথায় কি করছে। কাদের সাথে মিশছে, চলাফেরায় কখন কি পরিবর্তন হচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন, বিদেশে গিয়ে কি করছে, কি শিখছে। এসব দিকে যতদূর সম্ভব নজর না দিলে কোনভাবেই বাংলাদেশ কে নিরাপদ রাষ্ট্র করা যাবে না।
আরেকটি বিষয়ে সরকার কে বড় ভুমিকা রাখতে হবে, সেটি হলো যে কোন দুর্যোগে বিশেষ করে জাতীয় দুর্যোগে প্রতিহিংসা নয় সার্বভৌম’র পক্ষদের রাজনৈতিক ঐক্য গড়তে হবে । আমি মনে করি, দেশে এখন বড় ধরনের জাতীয় দুর্যোগ চলছে। এমন সময়ে সরকারী পদক্ষেপগুলো কে জনগণ কে জানাতে হবে, কোন গোপনীয়তা নয়। তাহলে জনগণ ঢাল হয়ে দেশ কে বাঁচাতে এগিয়ে আসবে, বিশেষ করে এই ধরণের জঙ্গীবাদ, হামলা মোকাবেলায় সহযোগীতা পাওয়া যাবে।
জঙ্গী নিয়ে আমাদের দেশের প্রশাসন অপরিসীম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে বরাবর। নিশ্চয় আমাদের মনে আছে দেশে একযোগে, একই সময়ে ৬৪টি জেলায় বোমা বিষ্ফােরণ ঘটিয়েছিল জেএমবি জঙ্গীরা। সেই হামলা, বিষ্ফােরণ সম্পর্কে বিন্দু পরিমান জানতে পারেনি গোয়েন্দা বাহিনীগুলো, কেন ? কোন কাজে ৬/৭ টি গোয়েন্দা সংস্থা তৈরী করা হয়েছে ? রাজশাহীর বাঘমারায় দিনে দিনে জঙ্গীরা বেড়ে উঠেছিল স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতাতে। তখন বলা হয়েছিল সন্ত্রাস দমনে বাংলা ভায়ের বাহিনী ভাল ভুমিকা রাখছে, এসব ভাবা যায় ? বাইরের রাষ্ট্রগুলোর দোষ দিয়ে লাভ নেই। ‘তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে’ এটি মাথায় নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। নইলে অসংখ্য গুলশান ট্রাজেডি থামানো যাবে না, কোন ভাবেই।
দু,চার লাইনেই লেখাটি শেষ করতে চেয়েছিলাম কিন্ত শেষ হয়েও হচ্ছে না । প্রসঙ্গটি তো আর ছোট্ট নেই । শেষের দিকে বলি, দেশে যতই ফ্লাইওভার, ঝুলন্ত সেতু, হাতির ঝিল, পাতাল সেতু, সড়ক-মহাসড়কে লেনের পর লেন বা তিলোত্তমা রাজধানী করা হোক কোন লাভ নেই, এসব চার আনার কাজে আসবে না নিরাপদ রাষ্টের জন্য, নিরাপদ নাগরিকদের জন্য। গলা বাড়িয়ে যতই বলা হবে জিডিপি, প্রবৃদ্ধি এত মাত্রায়, অতো মাত্রায় বাড়ছে, গড় আয়ু আকাশ ছুঁয়েছে, তিনবেলা খাচ্ছে মানুষ, শ্রমিকের হাতে টাকা বাড়ছে সবই ব্যর্থ হবে ঐ একফোঁটা গো-চুনা মানে জঙ্গীর মিশ্রণে । জঙ্গী দমন শব্দ টা শুনতে চাই না কারণ দমন মানে তো শেষ না। দেশে, দেশের মাটিতে যাতে তরুণ, যুবকেরা জঙ্গী-সন্ত্রাসী হয়ে না ওঠে সেই ব্যবস্থা তৈরী করতে হবে। আমরা যে বড় দেরী করে ফেলেছি, যেটি ছিল সহজ কাঁদা-মাটি তা এখন শুকিয়ে শক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেছে। তবু হতাশ হতে চাই না, ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে নিশ্চয় নিরাপদ থাকবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ।
আব্দুর রহমান মিল্টন,
ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি,
ভোরের কাগজ।
লেখাটা ভালো লেগেছে।