Sun. Dec 22nd, 2024

ঝিনাইদহ নিউজ

সবার আগে সর্বশেষ

পরিবেশ বিপর্যয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তার বাসা

1 min read
পরিবেশ বিপর্যয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তার বাসা

পরিবেশ বিপর্যয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তার বাসা

পরিবেশ বিপর্যয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তার বাসা
পরিবেশ বিপর্যয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তার বাসা

আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নিপুণ বাসা তৈরির দক্ষ কারিগর বাবুই পাখি। তার বাসা এখন আর আগের মত চোখে পড়ে না। পরিবেশ বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়, নতুন বনায়নে বাসযোগ্য পরিবেশ ও খাদ্যের অভাব, নির্বিচারে তালগাছ কর্তন, অসাধু শিকারীর ফাঁদসহ বহুবিধ কারণে কালের আবর্তে প্রকৃতির স্থপতি, বয়ন শিল্পী এবং সামাজিক বন্ধনের প্রতিচ্ছবি বাবুই পাখি ও এর দৃষ্টিনন্দন বাসা ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।

আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগেও গ্রামগঞ্জে ব্যাপকভাবে বাবুই পাখি ও এর বাসা চোখে পড়ত। কিচিরমিচির শব্দ আর এদের শৈল্পিক বাসা মানুষকে পুলকিত করত। অপূর্ব শিল্প শৈলীতে প্রকৃতির অপার বিষ্ময় এদের সেই ঝুলন্ত বাসা বাড়ির তালগাছসহ নদীর পাড়ে, পুকুর পাড়ে, বিলের ধারে এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। আগের মতো বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় না গ্রাম বাংলার জনপদ।

পরিবেশ বিপর্যয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তার বাসা
পরিবেশ বিপর্যয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তার বাসা

নিরীহ, শান্ত প্রকৃতির এই বাবুই পাখি উচু এবং নিরিবিলি পরিবেশে বাসা তৈরি করে। গ্রামগঞ্জের তাল, সুপারি, নাড়িকেল,ও খেজুর গাছ বা আখক্ষেতে বাসা তৈরি করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে এরা। এসব গাছের সংকটে মাঝে মাঝে বৈন্যা ও হিজল গাছেও বাসা বাঁধতে দেখা যায়। এই পাখি বাসা তৈরির কাজে ব্যবহার করে থাকে খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচি পাতা, ঝাউ ও কাঁশবনের লতা।

চমৎকার আকৃতির এই বাসা বিশেষ করে তাল গাছের ডালে এমনভাবে সাঁটানো থাকে যাতে কোনো ঝড়-তুফানে সহসাই ছিঁড়ে না পড়ে। এদের বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই নয়, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক জোগায় এবং স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করে। এটি দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনই মজবুত। ঠোঁট দিয়ে বাবুই পাখি আস্তর ছড়ায়। পেট দিয়ে ঘঁষে তা আবার মসৃণ করে।

পরিবেশ বিপর্যয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তার বাসা
পরিবেশ বিপর্যয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তার বাসা

বাসা বানাতে শুরুতেই দুটি নিম্নমুখী গর্ত করে থাকে। পরে তা একদিকে বন্ধ করে ডিম পাড়ার জায়গা করে। অন্যদিকে লম্বা করে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ তৈরি করে। ব্যালেন্স করার জন্য বাসার ভিতরে কাদার প্রলেপ দেয়। এমন বাসাও তৈরি করে যেখানে বসে দোলনার মতো দোল খায়। আধুনিক যুগে যা বড়ই যুক্তি সংগত। বাসার ভিতরে ঠিক মাঝখানে একটি আড়া তৈরি করে বাবুই পাখি। যে আড়াতে পাশা পাশি বসে এরা প্রেম আলাপসহ নানা রকম গল্প করে। এ আড়াতেই এরা নিদ্রা যায়।

কি অপূর্ব বিজ্ঞান সম্মত চেতোনাবোধ। ছোট্ট হলেও বুদ্ধিতে সব পাখিকে হার মানায়। এক গাছ থেকে আরেক গাছ, এক বাসা থেকে আরেক বাসায় এরা সঙ্গী খুঁজতে। পছন্দ হলে সঙ্গী বানানোর জন্য কত কিছুই না করে। পুরুষ বাবুই নিজের প্রতি আকর্ষণ করার জন্য ডোবার গোসল সেরে ফুর্তিতে নেচে নেচে উড়ে বেড়ায় এক ডাল থেকে অন্য ডালে। এরপর উচুঁ গাছের ডালে বাসা তৈরির কাজ শুরু করে। অর্ধেক কাজ হলে কাঙ্খিত স্ত্রী বাবুইকে ডেকে সেই বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলেই কেবল পুরো কাজ শেষ করে। তা না হলে অর্ধেক কাজ করেই নতুন করে আরেকটি বাসা তৈরির কাজ শুরু করে। অর্ধেক বাসা বাঁধতে সময় লাগে ৪-৫ দিন। কাঙ্খিত স্ত্রী বাবুইর পাখির পছন্দ হলে বাকিটা শেষ করতে সময় লাগে ৪ দিন।

পরিবেশ বিপর্যয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তার বাসা
পরিবেশ বিপর্যয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তার বাসা

পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ৬ টি পর্যন্ত বাসা বুনতে পারে। তাছাড়া এরা ঘর করতে পারে ৬ টির সঙ্গে। স্ত্রী বাবুইদের এতে কোন বাধা নেই। প্রজনন প্রক্রিয়ায় স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। আর বাচ্চা বাসা ছেড়ে প্রথম উড়ে যায় জন্মের তিন সপ্তাহের মধ্যে। ধান ঘরে ওঠার মৌসুম হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। দুধ ধান সংগ্রহ করে এনে স্ত্রী বাবুই বাচ্চাদের খাওয়ায়। এরা তালগাছেই বাসা বাঁধে বেশি। সঙ্গত কারণেই বাবুই পাখি তালগাছ ছেড়ে ভিন্ন গাছে নীড় বেঁধেছে।

এই দক্ষ স্থপতি বাবুই পাখির নীড় ভেঙে দিচ্ছে একশ্রেণির অসাধু মানুষ। জানা গেছে, এক শ্রেণীর মানুষ অর্থের লোভে বাবুই পাখির বাসা সংগ্রহ করে শহরে ধনীদের নিকট বিক্রি করছে। ধনীদের ড্রইং রুমে এখন শোভা পাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য দৃষ্টি নন্দন বাবুই পাখির বাসা। রাতের আধারে পাখি শিকারীদের জালে বাবুই পাখি আটক হয়ে বিক্রি হচ্ছে শহরের পাখি শিকারিদের দোকানে। বাবুই পাখি হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো শিকার করা। নির্বিচারে এ পাখির আবাস্থল ধ্বংস করা। যার ফলে আজ এই পাখি আর চোখে পড়ে না আগের মতো।

তবে বিলুপ্তি ঠেকাতে প্রথমত দরকার হলো জন-সচেতনতা আর সরকারিভাবে প্রজননের মাধ্যমে বাবুই পাখির বিলুপ্তি ঠেকানো সম্ভব । সরকার এ পাখি অবাধ বিচরণের ব্যবস্থা করতে পারলে আগের মতোই গ্রাম-বাংলায় শোনা যাবে এ পাখির কলতান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *