পুলিশ পরিচয়ে শ্রমিকলীগ নেতা সহ মোট ৫জনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ
1 min readঝিনাইদহে হাফিজুর রহমান (৪০) নামে শ্রমিক লীগের একজন নেতাকে পুলিশ পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছে পরিবার।
এ ঘটনার কয়েক দিন আগে ঝিনাইদহে মিনারুল ইসলাম নামে এক স্কুলশিক্ষককে একইভাবে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছিল তাঁর পরিবার। তবে ঘটনার চার দিন পর বৃহস্পতিবার ভোরে ঝিনাইদহ শহরের বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে তাঁকে অস্ত্রসহ আটকের দাবি করে পুলিশ।
হাফিজুরকে নিয়ে এ পর্যন্ত জেলায় বিএনপি, যুবলীগ, শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীসহ পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁদের সবাইকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ।
শ্রমিক লীগের নেতা হাফিজুরের স্ত্রী জাহানারা খাতুন বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে তাঁরা বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ বেশ কয়েকজন লোক ঘরের জানালায় ধাক্কা দেওয়া শুরু করেন। জানালা দিয়ে উঁকি দিলে বাইরে থেকে পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে ১৫-২০ জন দরজা খুলতে বলেন। দরজা খুলে দিলে তাঁরা ঘরে ঢুকে তাঁর স্বামীকে তুলে নিয়ে যান। তাঁদের অনেকের কাছে বন্দুক ছিল। কয়েকজন ছিলেন পুলিশের পোশাকে। স্বামীকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে সকালে থানায় যেতে বলেন তাঁরা। কিন্তু সকালে থানায় গেলে পুলিশ বলে, তারা তাঁকে আটক করেনি। স্বামীর কোন সন্ধান পাচ্ছেন না তিনি। তাঁর স্বামীর নামে কোনো মামলা নেই বলে জানান জাহানারা।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী বলেন, হাফিজুর রহমানের পরিবার থানায় এসেছিল। নিখোঁজ হওয়ার খবরটি তাঁরাও শুনেছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে উঠিয়ে আনা হয়নি। এ ছাড়া নিখোঁজ অন্যদের বিষয়ে নিজ নিজ পরিবারকে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নিখোঁজ আরও চারজন: ঝিনাইদহ শহরের কোরাপাড়ার বাসিন্দা ও যুবলীগ কর্মী জাহিদুল ইসলামকে (৩৬) গত ১ জুন দিনের বেলায় লোকজনের সামনে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই থেকে তিনি নিখোঁজ। তাঁর ভাই নাজিম উদ্দিন বলেন, জাহিদুলের নামে কোনো মামলা নেই। পুলিশ তাঁর খোঁজ দিতে পারছে না। স্বামীর সন্ধানে দুই শিশুসন্তান নিয়ে স্ত্রী সুরভী বেগম এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
গত ৩ জুন থেকে নিখোঁজ রয়েছেন ঝিনাইদহ উপশহর মসজিদের মোয়াজ্জিন সোহেল রানা (২২)। ওই দিন জুমার নামাজের পর পুলিশ পরিচয়ে পাঁচ-ছয়জন লোক একটি মাইক্রোবাসে করে তাঁকে তুলে নিয়ে যান। সোহেলের ভাই মাসুদুর রহমান বলেন, তাঁর ভাই কোনো রাজনীতি করেন না। তাঁর নামে কোনো অভিযোগও নেই। তারপরও তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গত ১৩ জুলাই তুলে নিয়ে যাওয়া হয় কালীগঞ্জের ষাটবাড়িয়া গ্রামের আশরাফুল আলমের একমাত্র ছেলে আবদুল হাইকে (৩৫)। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে বাড়িতে হোমিও চিকিৎসা দিতেন। পাশাপাশি বাড়ির পাশের মসজিদে ইমামতি করতেন। তাঁর স্ত্রী লিমা খাতুন বলেন, স্বামীকে অনেক জায়গায় খুঁজেছেন, কিন্তু পাননি। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে।
৩০ জুলাই রাতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আনিচুর রহমানকে (৩৫)। তাঁর ভাই আবদুল মান্নান বলেন, ঘরে ঘুম থেকে জাগিয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এখনো তাঁর খোঁজ মেলেনি। তাঁর স্ত্রী রোজিনা খাতুন স্বামীকে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
সর্বশেষ পরিস্থিতিঃ নিখোজের ৮ দিন পর ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুর পুলিশ হত্যা মামলার আসামী জামায়াত নেতা ইদ্রিস আলী ওরফে পান্নার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হতে পারে। গত ১২ই আগস্ট শুক্রবার সকালে ঝিনাইদহ-হরিণাকুন্ডু সড়কের পাশ থেকে পুলিশ তার মৃতদেহটি উদ্ধার করে।
গত ০৪ আগস্ট মোটরসাইকেলযোগে শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর বাজারে যাওয়ার পথে তিনি নিখোঁজ হন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে গত ৯ আগস্ট ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানায়। তিনি হরিণাকুন্ডুর রঘুনাথপুর গ্রামের হোসেন আলী আলীম মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন এবং রঘুনাথপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর ছিলেন। তিনি হরিণাকুন্ডুর রঘুনাথপুর গ্রামের কাওছার আলীর ছেলে।
হরিণাকুন্ডু থানার ওসি মাহতাব উদ্দিন জানান, নিহত জামায়াত নেতা ইদ্রিস আলী ওরফে পান্নার বিরুদ্ধে হরিণাকুন্ডু থানায় পুলিশ হত্যা মামলাসহ ৪ টি মামলা রয়েছে। তিনি মোটরসাইকেলযোগে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।