বড় দুই দলেই কোন্দল
1 min readঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন এবং ঝিনাইদহ সদরে আংশিক ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনটি গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৪৯ হাজার ২২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৫ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ২৪ হজার ৭৭৭ জন।
এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন। এর মধ্যে তারা বিভিন্নভাবে প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। কেউবা বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যারা মনোনয়ন চাইতে পারেন তারা হলেন- বর্তমান এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার, সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠাণ্ডু উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি এবং কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বিজু, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদ শমসের ও আক্কাস আলী।
অপরদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি শহীদুজ্জামান বেল্টু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা হারুন অর রশিদ মোল্লা।
গত ৫টি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৩১ ভোটের মধ্যে বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু পান ৪১ হাাজর ৯৭১ ভোট। তার নিকটতম আওয়ামী লীগের শাহ মো. জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ৩১ হাজার ৫৫৩ ভোট। এ আসন থেকে জামায়াতের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম পান ১৯ হাজার ৯৪৪ ভোট। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৪২ ভোটের মধ্যে বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু পান ৬০ হাজার ৬৯৬ ভোট। আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান পান ৪৯ হাজার ৬০৫ ভোট। জামায়াত ইসলামীর আবু তালেব পান ২০ হাজার ১০৮ ভোট। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২ লাখ ৩ হাজার ২৭৬ ভোটের মধ্যে বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু পান ৯৫ হাজার ৯৯১ ভোট। আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান পান ৭৪ হাজার ৪৫৮ ভোট। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান পান ১ লাখ ৫ হাজার ৮৫২ ভোট। আর বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু পান ১ লাখ ১ হাজার ১৭৫ ভোট। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আজীম আনার পান ১ লাখ ৩ হাজার ৪৭৮ ভোট। তার নিকটতম প্রার্থী বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির মোস্তফা আলমগীর পান ৫ হাজার ৩৯৮ ভোট। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করেনি।
এই আসনে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান ও সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আজীম আনার এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন।
ঝিনাইদহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির উভয় দলের মধ্যে লবিং গ্রুপিং বিদ্যমান। আওয়ামী লীগের ৩টি গ্রুপ রযেছে। এর মধ্যে একটি বর্তমান এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার, আরেকটি সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান এবং আরেকটি নেতৃত্ব দিচ্ছেন কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বিজু। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আনোয়ারুল আজীম আনার, আব্দুল মান্নান ও মোস্তাফিজুর রহমানের মধ্যে কেউ একজন নৌকার মাঝি হতে পারেন।
অপরদিকে বিএনপির ২টি গ্রুপ বিদ্যমান। এর মধ্যে সাবেক এমপি শহীদুজ্জামান বেল্টু একটিতে আর সাবেক পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান ও হামিদুল ইসলাম নেতৃত্ব দেন আরেকটি গ্রুপের। মূলত দলের দুঃসময়ে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ বিএনপিকে চাঙ্গা করে রাখেন। সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত শহীদুজ্জামান বেল্টু সেই সময় মাঠেই নামতে পারেননি। এই আসনে বিএনপির নতুন একজন প্রার্থী বর্তমানে বেশ আলোচনায় এসেছেন। তিনি হলেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। তিনি এর আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন। ছাত্রনেতা হিসেবে সাইফুল ইসলামের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। ঝিনাইদহ-৪ এলাকার অনেক লোকজনকে তিনি চাকরি দেয়াসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করেছেন। ইতিমধ্যে বিএনপির ভোটারদের অনেক কাছে তিনি যেতে পেরেছেন। এবারের নির্বাচনে তিনি এই আসন থেকে মনোনয়ন পেতে প্রচার প্রচারণায় নেমেছেন। তবে শহীদুজ্জামান বেল্টু ও হামিদুল ইসলাম হামিদও মনোনয়ন পেতে মরিয়া। বিএনপির ভোটাররা চাইছেন নতুন ও তরুণ নেতৃত্ব।
শাহজাহান আলী বিপাশ।