ভুট্টায় দোল খাচ্ছে চাষীর স্বপ্ন
1 min readলাভজনক ফসল হওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাষীদের মধ্যে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছে প্রায় দুই হাজার ৫০ জন চাষী। মাঠের পর মাঠ জমিতে সবুজ পাতার আড়ালে হাসছে হলুদ রঙের ভুট্রা। মাথায় লাল ফুল, গায়ে হলুদ বর্ণের এসব ভুট্টা দোল খাচ্ছে বাতাসে। অনেক চাষীর জমিতে রোপন করা ভুট্রা গাছে মুচা বাঁধতে শুরু করেছে। বাতাসে ভুট্টার দোল খাওয়ার সাথে চাষীও লাভের স্বপ্ন দেখছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানাগেছে, খরচ কম ও উৎপাদন বেশি হওয়ায় চাষীদের মধ্যে ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আর তাদের বেশি করে উদ্বুদ্ধ করতে হচ্ছে না। অনেক চাষী নিজে আগ্রহী হয়ে ভুট্টা চাষ করছেন। কালীগঞ্জ কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার সাহা জানান, ৩/৪ বছর আগে এ উপজেলায় ভুট্টা চাষীর সংখ্যা ছিল অনেক কম। সে সময় হাতে গুনা ৭শ থেকে ৮শ জন চাষী ভুট্টা চাষ করতো। কিন্তু সেই অবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। গত মৌসুমে ভুট্টা চাষ হয়েছিল ১১০ হেক্টর জমিতে। আর চলতি মৌসুমে সাড়ে ৩শ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে ২৪০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ বেশি হয়েছে।
ওই উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর, আলাইপুর, দাদপুর, হাসানহাটি, সানবান্ধা, মস্তবাপুর ও ফরাসপুর গ্রামের জমিতে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে। ভুট্টা চাষে প্রায় অর্ধেক আবার বাজার বুঝে তার বেশিও লাভ থাকে। কালুখালী গ্রামের ভুট্টা চাষী শুকুর আলী জানান, তিনি প্রায় ৫০ শতক জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। ৫০ শতক জমিতে ভুট্টা আবাদ করতে সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও পরিচর্যা বাবদ তার ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শতক প্রতি তিনি ১ থেকে দেড় মণ করে ভুট্টা পাবেন। ফলন ভাল হলে সে হিসেবে শুকুর আলী ৫০ শতকে কমপক্ষে ৫০ মণ ভুট্টা পাবেন। তিনি আরো জানান, বাজারে ৬শ থেকে ৭শ টাকা মণ দরে ভুট্টা বিক্রি হয়ে থাকে।
অপরদিকে ফরাসপুর গ্রামের ভুট্টা চাষী আক্তার, জহর, সামাদ, নুুরুল ইসলামসহ একাধিক চাষী জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষে ঝুঁকি কম। কারণ ভুট্টায় রোগ-বালাই খুব কম হয়। লাগানো থেকে শুরু করে ৫ মাসের মধ্যে ভুট্টার ফলন পাওয়া যায়। খরচ-খরচা বাদে প্রায় অর্ধেক লাভ থাকে। বাজার ভাল হলে ভালও বেশি হয়। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহিদুল করিম বলেন, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও মহেশপুর এলাকায় ভুট্টার আবাদ বেশি হয়।
ইদানিং কালীগঞ্জ উপজেলায়ও ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মৌসুমে ২৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্রার চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছে সাড়ে ৩শ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হেক্টর জমিতে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, ভুট্টায় তেমন একটা রোগ বালাই হয় না। তাই ভুট্টা চাষে ঝুঁকি কম আবার লাভও ভাল হয়। যার কারনে আগের থেকে ভুট্টা চাষে চাষীদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে প্রায় ২ হাজার ৫০ জন চাষী ভুট্টার আবাদ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়াতে ৫০০ জন চাষীকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এসব চাষীদের বিনামূল্যে ২ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার ও ৩০ কেজি এমওপি সার দেয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ভুট্টার উপর ৩০ টি প্রদর্শণী প্লট করা হয়েছে।