মোবারকগঞ্জ চিনিকলে ৪৫ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত, মিল পেরিয়ে ৪৮ টাকার চিনি ৬২ টাকা
1 min read
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অবস্থিত দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ভারি শিল্পি প্রতিষ্ঠান মোবারকগঞ্জ চিনিকলের উৎপাদিত চিনি মিলগেটে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ ও ৫২ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীরা এ চিনি মিলগেট পার করেই ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছে ৬২ টাকা। এক কেজি চিনি মিলের কাছ থেকে ক্রয় করে ১৪ টাকা বেশি মুনাফায় বিক্রি করছে। তবে সাধারন ভোক্তা আর মিল কর্তৃপক্ষ বলছে রমজান ও ঈদে চিনির ব্যপক চাহিদা থাকার কারণে এই সুযোগ গ্রহন করছে কিছু অসাধু ডিলার ও ব্যবসায়ীরা। এদিকে ন্যায্য মূল্যে মিল এলাকার সাধারন ভোক্তাদের হাতে চিনি পৌছে দিতে মিল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব পরিবহনে করে ৪৮ টাকা খোলা ও ৫২ টাকা কেজি দরে প্যাকিং করা চিনি খোলাবাজারে চিনি বিক্রি করছে।
এদিকে গত কয়েক বছরে মিলটি অর্থ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না। ফলে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবথেকে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল ফিতর এগিয়ে আসলেও জুন মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি প্রায় ৬শ শ্রমিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর। তবে ক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের ঠেকাতে আপাতত বোনাসের টাকা পরিশোধ করছে মিলটি।এদিকে ঈদের আগেই জুন মাসের বেতন না পেয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা। তারা জুন মাসের বেতন ও সরকার ঘোষিত নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪-২০১৫ আখ মাড়াই মৌসুমে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৯২১ মেট্রিক টন থাকলেও উৎপাদন হয় ৪ হাজার দুইশত ৩৫ মেট্রিক টন। সর্বশেষ ২০১৫-২০১৬ মাড়াই মৌসুমে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরে ৪ হাজার ১২০ মেট্রিক টন তবে উৎপাদন করে করে ৪ হাজার একশত ২৫ মেট্রিক টন। গত দুই মাড়াই মৌসুমে উৎপাদিত ৮ হাজার ৩শ ৫৯ মেট্রিক টন চিনির প্রায় সবই অবিক্রিত রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। এদিকে গত কয়েক মাসে ২০১৩-২০১৪ মাড়াই মৌসুমে উৎপাদিত চিনি ও সবেমাত্র শেষ হওয়া আখ মাড়ায়ের চিনি বিক্রি করেছে। তবে সে টাকার সিংহভাই হেড অফিসের দেনা পরিশোর করতে ব্যয় হয়েছে। ফলে শ্রমিকদের জুন মাসের বেতন দিতে পারছে না মিলটি।
মোবারকগঞ্জ চিনিকল এলাকা কালীগ্েঞ্জর বিশিষ্ট চিনি ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের জানান, মিলের তালিকাভুক্ত ডিলার আছে প্রায় ৮০০ জন। স্থানীয় ঝিনাইদহ জেলায় আছে মাত্র ২২ জনের মতো। মিল গেটে চিনির কেজি ৪৮ টাকা হলে একজন ডিলার চিনি পায় মাত্র এক টন। জেলার ২২ ডিলারের এই চিনি দিয়ে ভোক্তাদের চাহিদা মেটানো একেবারে অসম্ভব। যে কারনে বাইরের ডিলারদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি ডিও কিনে চিনি উত্তোলন করতে হয়। ফলে ৪৮ টাকা এক কেজি চিনির মূল্য হলেও আমরা বেশি দামেই চিনি উত্তোলন করি। তবে তালিকাভুক্ত ডিলাররা ৪৮ টাকা কেজি দরেই মিলগেট থেকে চিনি উত্তোলন করে বলে এই ব্যবসায়ী জানান।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বলরামপুর গ্রামের ভোক্তা ওহিদুল ইসলাম জাানান, শুনেছি সুগারমিলে চিনি ৪৮ টাকা কেজি দরে পাওয়া যায়। কিন্তু আমি কয়েকবার চেষ্টা করে পায়নি। ফলে বাধ্য হয়ে বাজার থেকে ৬২ টাকা দরে কেজির চিনি কিনেছি।
মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন জানান, আমরা হেড অফিসের নির্দেশে স্থানীয় ডিলারদের কাছে নির্ধারিত মূল্যে চিনি বিক্রি করি। কিন্তু রমজান এবং ঈদে চিনির চাহিদা বেশি থাকায় ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মূল্যে ভোক্তাদের কাছে চিনি বিক্রি করছে। একারণে ন্যায্য মূল্যে মিল এলাকার সাধারন ভোক্তা যেন চিনি কিনতে পারে এজন্য মিলের শ্রমিকরা নিজস্ব পরিবহনে করে ৪৮ টাকা কেজি দরে খোলাবাজারে চিনি বিক্রি করছে।
উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে আখ মাড়ায়ের মধ্যে দিয়ে প্রথম যাত্রা শুরু হওয়া এ মিলটি পুঞ্জিভূত দেনা রয়েছে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা। ১৯৬৫ সালে হল্যান্ডের স্টর্ক ওয়ার্কস পুওর কোম্পানীর নির্মানকৃত মিলটির প্রতিদিন মাড়াই ক্ষমতা ১৫০০ মেট্রিক টন। ১৮৯.৪০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই মিলটি প্রথম পরীক্ষা মূলক মাড়াই মৌসুম শুরু হয় ১৯৬৭-৬৮ সালে।
তারেক মাহমুদ
ঝিনাইদহ