রক্তের দাগ মুছে প্রস্তুত নিউজিল্যান্ডের সেই মসজিদ
1 min readঝিনাইদহ নিউজ ডেস্ক: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ এলাকার সেই আল নূর মসজিদের রক্তের দাগগুলো ধুয়ে-মুছে সাফ করা হয়েছে। বুলেটের ছিদ্র মুছে ফেলতে দেয়ালগুলোতে নতুন করে প্লাস্টার করা হয়েছে। মসজিদটির মেঝেতেও বিছানো হয়েছে নতুন কার্পেট। পবিত্র রমজান উদযাপনেই এই প্রস্তুতি।
গত ১৫ মার্চ আল নূর মসজিদ ও এর পার্শ্ববর্তী লিনউড মসজিদে এক শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসবাদীর হামলায় নামাজরত ৫১ জন মুসলিম নিহত হন।
দেশটির মুসলিমরা হাসিমুখেই পবিত্র রমজান উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নিলেও ওই হামলার ফলে তাদের মনে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা এখনো তাজা রয়ে গেছে। টনি গ্রিন নামে মসজিদটির এক মুখপাত্র আরব আমিরাত ভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য ন্যাশনালকে সোমবার জানিয়েছেন, আল নূর মসজিদে মাগরিবের নামাজ স্বাভাবিকভাবেই পড়া হবে। তবে এসময় মসজিদটির নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।
‘আমরা ভান করতে পারি না যে, এবারের রমজানও আগের মতোই উৎসবমুখর হবে। কেননা যারা ওই সন্ত্রাসী হামলায় পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের হারিয়েছেন তাদের হৃদয়ের ক্ষত এখনো শুকায়নি। তাদের মনে এখনো অনেক দুঃখ রয়ে গেছে।’
তবে রমজান উপলক্ষে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকরা পরস্পরের আরো কাছাকাছি আসার সুযোগ পাবেন। এর মধ্য দিয়ে হয়তো তাদের হৃদয়ের ক্ষত কিছুটা দূর হবে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন তারা।
নিউজিল্যান্ডের ৪৮ লাখ জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ মুসলিম। নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে রয়েছে- স্থানীয় আদিবাসী মাওরি, স্থানীয় ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান, ১৯ ও ২০ শতকের অভিবাসীরা, এবং সাম্প্রতিক অভিবাসী ও উদ্বাস্তুরা।
ব্রেন্টন ট্যারেন্ট নামের ২৮ বছর বয়সী যে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী গত ১৫ মার্চের সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে তার মূল উদ্দেশ্য ছিলো নিউজিল্যান্ডের সমাজে মুসলিমদের অবস্থানকে হেয় প্রতিপন্ন করা।
মি. গ্রিন বলেন, ওই হামলার ফলে নিউজিল্যান্ডের মুসলিমদের নিরাপত্তা বোধ টলে গিয়েছে। হতাহতের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে এবং নিরাপত্তাবোধ ফিরে পেতেও বেশ সময় লাগে।
মি. গ্রিন জানান, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, ওই হামলায় বেঁচে যাওয়ারা পুনরায় মসজিদে আসা শুরু করেছেন। কেউ ক্রাচে বা হ্যান্ড স্লিংয়ে ভর করে আবার কেউবা হুইল চেয়ারে চড়ে এসেছেন।
ওই হামলায় বেঁচে যাওয়া আদিব সামি নামের একজন বলেন, হামলার পরও নিউজিল্যান্ডকে আমার নিজের দেশের মতোই মনে হচ্ছে।
আল নূর মসজিদের হামলায় পিঠে ও কাঁধে গুলি লেগে আহত হয়েছিলেন আদিব সামি। ইরাকি বংশোদ্ভুত মি. সামি (৫২) নিউজিল্যান্ড এবং আরব আমিরাতে কাজ করেন এক মার্কিন বহুজাতিক কম্পানির হয়ে। আমেরিকান বহুজাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি এ্যায়েকম (Aecom) এর একজন পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
তার জখম এখনো পুরোপুরি ভালো হয়নি। তথাপি তিনি রমজানে রোজা রাখার জন্য ডাক্তারের অনুমোদন পেয়েছেন।
আদিব সামি জানান, নিউজিল্যান্ডের পুলিশ মুসলিমদের রক্ষায় যা কিছু করা সম্ভব তার সবই করছে। তবে কর্তৃপক্ষ অনেক সময় কার্যকরভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে না।
সামি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে কী ঘটছে তা বলে না। যা আমাদের মধ্যে অস্বস্তির সৃষ্টি করছে। পুলিশের উচিত আমাদেরকে সব তথ্য সরবরাহ করা। যাতে আমরা আরো নিরাপদ বোধ করতে পারি।’
তবে এরপরও ক্রাইস্টচার্চ তার ও তার পরিবারের জন্য নিজের বাড়ির মতোই রয়ে গেছে বলে জানান মি. সামি।
সামির প্রত্যাশা ১৫ মার্চের মতো আর কোনো সন্ত্রাসী হামলা হবে না দেশটির কোনো মসজিদে।
নিউজিল্যান্ড পুলিশ জানিয়েছে, সশস্ত্র পুলিশ কর্মকর্তারা দেশটির মসজিদ এবং উপসনালয়গুলোতে স্থায়ীভাবে পাহারা ও নজরদারিতে নিযুক্ত থাকবেন।