কোটচাঁদপুরে ‘জিন সাপ’ আতঙ্ক, মেডিকেল টিম গঠন
1 min readকথিত জিন সাপের কামড়ে একজনের মৃত্যু ও গত চার দিনে ৭০ জনের অধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে ওঝার দ্বারস্থ হওয়ার খবরে কোটচাঁদপুর উপজেলার হরিন্দিয়া গ্রামসহ আশপাশ এলাকার মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, তারা ম্যাস হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত।
এ ঘটনায় কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। টিম ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
হরিন্দিয়া গ্রামের মেম্বর আশাদুল ইসলাম ঝিনাইদহ নিউজকে বলেন, ‘গত শনিবার থেকে গ্রামে কথিত জিন সাপের আতংক শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৭০ জনেরও বেশি ব্যক্তি আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পাশের গ্রাম রাজাপুরের ওঝা আব্দুর রাজ্জাকের শরণাপন্ন হয়ে ঝাড়-ফুঁক নিয়েছেন।’
খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে হরিন্দয়া গ্রামের বাজারপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কথিত জিন সাপে কামড়ানোর অজুহাতে ওঝা আব্দুর রাজ্জাক ও তার সহযোগী মোন্তাজুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলামের বাড়িতে তার স্ত্রী রিনা বেগমকে ঝাড়-ফুঁক দিচ্ছেন। এ সময় খবর আসে পাশের আরো কয়েকটি বাড়ি থেকে ৪-৫ জনকে জিন সাপে কামড়েছে। অথচ তারা কেউ সাপ দেখতে পাচ্ছেন না। এভাবেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
হরিন্দিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নান ঝিনাইদহ নিউজকে জানান, তার স্ত্রী রাহাতুন নেছা (৪০) শুক্রবার রাতে ঘরে একা ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ রাত দুইটার দিকে ঘরের বারান্দায় ঘুমন্ত স্বামী মান্নানকে ডেকে জানান, তার হাতে হয়তো সাপে কামড় দিয়েছে। তবে তিনি সাপ দেখেননি। হাতে জ্বালা পোড়া করছে ও বুকে যন্ত্রণা অনুভব করছেন।
এসময় পরিবারের সদস্যরা ঘর তল্লাশি করে ও হাতে সাপের কামড়ের আলামত পাননি। তা সত্ত্বেও তারা গ্রাম্য ডাক্তার রমজান আলীকে ডাকেন। রমজান আলী এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরও রাহাতুনের অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে।
শনিবার সকাল নয়টার দিকে রাহাতুন নেছাকে কোটচাঁদপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলে কর্তব্যরত ডাক্তার ওয়াদুদুর রহমান রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান। অবস্থা সঙ্কাটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি রোগীকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করে। যশোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে রাহাতুন নেছা মারা যান। ডাক্তাদের মতো আব্দুল মান্নানেরও ধারণা, তার স্ত্রী হৃদরোগে মারা গেছেন।
এদিকে সাপের কামড়ে রাহাতুন নেছার মৃত্যু হয়েছে বলে এলাকায় খবর চাউর হয়ে যায়। লাশ এলাকায় পৌঁছানোর আগেই ওই এলাকায় কয়েক ব্যক্তির হাতে বা পায়ে হঠাৎ করে সূঁচ ফোটানোর মতো লাল দাগ ও সেখানে সামান্য ফোলাসহ হাতে-পায়ে যন্ত্রণা শুরু হয়। শরীর অবশ হয়ে যাওয়ায় ওঝা ডেকে ঝাড়–ফুঁক করলে তারা সুস্থ হন।
ওঝা আব্দুর রাজ্জাক এলাকাবাসীকে জানান, এটা অদৃশ্য জিন সাপের কাজ। ওঝার একথা থেকেই এলাকাবাসীর মধ্যে অদৃশ্য জিন সাপের আতংক তৈরি হয়।
হরিন্দিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, তার দুই ছেলে-মেয়ে চাঁদনি (১৫) ও মাহিমকে (২) শনিবার জিন সাপে কামড়েছিল। তারা সাপ দেখতে না পেলেও সূঁচ ফোটানোর মতো ছোট্ট একটি লাল দাগ দেখেই মনে করছেন জিন সাপে কেটেছে। সে কারণে পাশের রাজাপুর গ্রামের ওঝা আব্দুর রাজ্জাক ও তার সহযোগী মোন্তাজুলকে ডেকে ঝাড়-ফুঁক দিয়ে দু’জনকে সুস্থ করা হয়েছে।
একই গ্রামের মিলন হোসেনের ছেলে জিম (৭), মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে আলী হোসেন (৪০), রতন হোসেনের ছেলে রাতুল (৭), মিরাজুল ইসলামের স্ত্রী রত্না (২৫), আকবর আলীর ছেলে রবিউল (৪২), ফজলুর রহমানের মেয়ে রিমা (১৩), আতিয়ার রহমানের ছেলে ডলার (১৮), মধু মণ্ডলের মেয়ে জোছনাসহ (২৫) এ পর্যন্ত অন্তত ৭০ জনের অধিক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে ওঝার শরণাপন্ন হয়েছেন। এক ব্যক্তি একাধিকবার অসুস্থ হয়ে পড়ারও নজির রয়েছে।
বিষয়টি দেখভালের জন্য কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন একটি মেডিকেল টিম গঠন করেছে। মঙ্গলবার সকালে মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে।
মেডিকেল টিমের প্রধান ডা. রাকিবুল হাসান ঝিনাইদহ নিউজকে বলেন, এতে ভয়ের কিছু নেই। আতংকে এমনটি হচ্ছে। এটি হলো ম্যাস হিস্টিরিয়া রোগ।