ঐতিহাসিক কামান্না দিবস পালিত ক্ষোভ প্রকাশ করলেন শহীদের স্বজনরা
1 min read
আজ ঐতিহাসিক ২৬ নভেম্বর, কামান্না দিবস। একাত্তরের এই দিনে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কামান্না গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর অতর্কিত হামলায় শহীদ হন ২৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাদের অধিকাংশের বাড়ি পার্শ্ববর্তী মাগুরা জেলায় এবং বাকীদের বাড়ি শৈলকুপায়। ১৯৭১ সালের ২৩ নভেম্বর মুজিব বাহিনীর ৪২ জন তরুণ শৈলকুপাকে হানাদার মুক্ত করার উদ্যেশ্যে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ শেষে কামান্না গ্রামে অবস্থান নেয়।
স্থানীয় রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের গোপন তৎপরতায় এ খবর রাতের আঁধারে দ্রুত পৌঁছে যায় ঝিনাইদহ, শৈলকুপা ও মাগুরার পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে। ২৬ নভেম্বর গভীর রাতে হানাদাররা চারদিক থেকে গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে। অতর্কিতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চালায় হামলা তারা। ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধারা ঘুম ভেঙে হতবিহ্বল ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন।
তারপরেও তারা শক্ত হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। কিন্তু পাকসেনাদের ভারী অস্ত্রশস্ত্রের মুখে বেশিক্ষণ টিকতে না পেরে পিছু হটতে বাধ্য হয় মুক্তিযোদ্ধারা। বিশ্বাস ঘাতকদের সহযোগিতায় এ যুদ্ধে ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা। হানাদাররা এলাকা ত্যাগ করার পর কামান্না হাই স্কুলের খেলার মাঠের উত্তরপাশে কুমার নদীর ধারে ৬টি গণকবরে মোট ২৭ বীর সন্তানকে কবর দেন তারা।
এ দিবস উপলক্ষে শনিবার উপজেলার বগুড়া ইউনিয়নের কামান্না গ্রামে কামান্না দিবস পালিত হয়েছে। ২৭ শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বগুুুড়া ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের উদ্দোগে ২৬ নভেম্বর দিবসটি পালন হয়। এ উপলক্ষ্যে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বগুুুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের পৌরহিত্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মাগুুুুুুুুুুরা জেলা ইউনিট কমান্ডার ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা নবুয়ত আলী মোল্লাহ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কামান্না ২৭ শহীদ স্মৃতি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বিশিষ্ট গেরিলাযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব বিশ্বাস লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ শৈলকুুপা উপজেলা শাখার সাধারন সম্বপাদক মুস্তাফা আরিফ রেজা মন্নু, মাগুরার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার একরাম হোসেন, লুৎফর রহমান টুলু । এছাড়া ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার কয়েকশ’ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদেও উত্তরসুরী ছাড়াও হাজারো মানুষ আলোচনা সভায় যোগ দেন।
বক্তারা জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শোষনহীন ও ধর্মনিরপেক্ষ স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তারা স্বাধীনতার ঘোষক বিষয়ে ও কামান্না দিবসকে ২৬ নভেম্বরের স্থলে ২৭ নভেম্বর করার অপচেষ্টা রুখে দাঁড়াবার জন্য মুক্তিযোদ্ধা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।
২৬ নভেম্বর কামান্না এসেছিলেন ২৭ শহীদের কণিষ্ঠতম সদস্য স্কুলছাত্র রাশেদের ছোটভাই খোন্দকার মোহাম্মদ আলী। পেশায় ব্যবসায়ী খোন্দকার মোহাম্মদ আলী অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে জানালেন, মুুুুুুুুক্তযোদ্ধাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছেনা। তার মতে, তিনি শিশুকাল থেকেই শুনে আসছেন- স্বাধীনতার পর ডজনখানেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য কামান্না গণকবর ও কামান্না ২৭ শহীদস্মৃতি সংঘ পরিদর্শণ করেছেন, জনসভা করে হাজারো মানুষ ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে এই মর্মে আশা¦াস দিয়েছিলেন যে, সেখানে একটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনসহ এলাকার সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে । কিন্তু আজতক কোন আশ্বাসেরই বাস্তবায়ন তারা দেখতে পাননি।