বর্নি ও বাবুলকে গ্রেফতার করলেই বেরিয়ে আসবে এসআই আকরাম হত্যা রহস্য -বোন রিনি
1 min readমাগুরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বানানী বশির বর্নি যে বলেছে বাবুল আক্তারকে সে চেনে না, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। কেননা যে দিন এসআই আকরাম মারা গেল সেই দিন (১৩ জানুয়ারী ২০১৫ সাল) আমার ভাইকে যখন দাফন করা হবে তখন সেখানে না থেকে ওর বাবার সাথে মাগুরায় সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের বাড়িতে গিয়ে উঠে। অথচ সে বলছে বাবুল আক্তারকে চেনেই না, এটা চরম মিথ্যা কথা ছাড়া কিছুই হতে পারে না। মঙ্গলবার দুপুর ২ টার দিকে ঝিনাইদহ জেলা শহরের মহিলা কলেজ সড়কের নিজ বাসায় এ কথা বলেন নিহত পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) এসআই আকরাম এর বোন ও মামলার বাদী জান্নাত আরা পারভীন রিনি।
জান্নাত আরা পারভীন রিনি বলেন, বিয়ের আগে থেকেই বর্নির সাথে বাবুল আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পারিবারিক ভাবেই অনেক আগে থেকেই তারা পরিচিত। কিন্তু আকরামের সাথে বিয়ের পর থেকেই সেই সম্পর্ক পরকীয়ায় রুপ নেয়। সেই পরকীয়ার জের ধরেই বর্নি এবং বাবুল আক্তার মিলে আমার ভাইকে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, বাবুল আক্তারের ভাই লাবু এবং অন্য এক ভাই কলিংস এর সাথে বর্নি ঘুরে বেড়াই।তাদের সহযোগীতা নিয়েই সে এসব মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছে। বর্নি বলছে সে নাকি ঝিনাইদহের বাবার বাড়ি থেকেই মাগুরা যাতায়াত করে। কিন্তু যদি সে ঝিনাইদহেই থাকবে তাহলে কেন মাগুরাতে সংবাদ সম্মেলন করছে? সে মাগুরাতে এসব করছে একারনেই যে সেখানে বাবুল আক্তার ও তার ভাই’দের সহযোগীতা পাচ্ছে।
এসময় তিনি আরো বলেন, সে বলছে আমার বাবা’র জমি আছে ঝিনাইদহে। হ্যা বাবা’র জমি আছে ঝিনাইদহে তাহলে আমরা কেন বর্নির পিছনে লাগতে যাব। বাবার জমি তো মেয়েরা পাবেই। আমার বাবা’র জমির কত মূল্য সেটা আমরাই জানি না, তাহলে বর্নি কি করে জানলো যে বাবা’র সব সম্পত্তির মূল্য কত? বর্নি তো শুধু সম্পত্তি চেয়েছে। আমার ভাইকে চাইনি। এ জন্যই সে আমার ভাইকে হত্যা করেছে।
ভাইকে হত্যা করার ৩ মাস আগে ঢাকা’র মগবাজারের ফ্লাট তার নিজ নামে লিখে নিয়েছে। যে কোন ভাবে বুঝিয়ে সে এই কাজ করেছে। ভাইকে দিয়ে ঝিনাইদহ শহরের কালীকাপুরে একটি জমি কিনিয়েছে এবং সেখানে বাড়ি করিয়ে নিচ্ছে।বাবার সম্পত্তি বোনেরা পায়, কিন্তু ভাইয়ের সম্পত্তিতো বোনেরা পায় না।তাহলে বর্নির পিছনে লাগা ভাই হত্যার বিচার চাওয়া ছাড়া অন্য কোন কারন থাকতেই পারে না।
জান্নাত আরা পারভীন রিনি আরো বলেন, আমার ভাই আকরামের সব সম্পত্তি বর্নি ও বাবুল আক্তার দু-জনে মিলে ভোগ করবে বলে পরিকল্পিত ভাবে ভাইকে হত্যা করেছে। এবং পরে গিয়ে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু’কে হত্যা করেছে। এ দুই হত্যাকান্ডই বর্নি আর বাবুল আক্তারের পরিকল্পিত ঘটনা। মুলত আমার ভাই হত্যাকান্ড থেকে বাচার জন্যই বর্নি বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছে।
মাগুরায় বনানী বিনতে বশির বর্নির সোমবারের করা সংবাদ সম্মেলনের কথার জবাবে রিনি বলেন, বর্নি বাবুল আক্তারকে চেনে এবং খুব ভাল করেই চেনে। বর্নি যে বলেছে বাবুল আক্তারের সাথে তার বয়সের অনেক ফারাকের কথা। কিন্তু আসলে বাবুল আক্তার আর বর্নির বয়সের ফারাক খুব বেশী নয়। ২/৪ বছরের ফারাক হতে পারে। বাবুল আক্তার আর বর্নির এসএসসি পাশেল সার্টিফিকেট দেখলেই সেটা বোঝা যাবে।
নিহত এস আই আকরামের বোন বলেন, গেল ২ বছর বর্নি বাবুল আক্তারের বাড়িতেই রয়েছে। বাবুলের ভাই লাবু কে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে বর্নি মাগুরায় যে সংবাদ সম্মেলন করেছিল সেখানে তার বাম পাশে বসেছিল বাবুল আক্তারের বাবা।তাহলে সে কিভাবে বলছে বাবুল আক্তারকে চেনে না ? সমস্ত কিছুই হচ্ছে বাবুল আক্তারের পরিবারের সহযোগীতায়।
ঝিনাইদহ নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে রিনি আরো বলেন, বনানী বশির বর্নি ও সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলেই মূল তথ্য উৎঘাটন হবে। বেরি আসবে এসআই আকরাম হত্যা ও মিতু হত্যায় তাদের পরিকল্পিত কাহিনী। আমার ভাই বাবুল আক্তার ও মিতুকে তারা যে স্বু-পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে, আমরা এর সঠিক বিচার চাই। তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক, যেন আর কেউ ভবিষ্যতে এমন নৃশংস ঘটনা আর না ঘটাতে পারে।
নিহত এসআই আকরামের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর এসআই আকরাম মটর সাইকেল যোগে ঢাকা থেকে যমুনা সেতু হয়ে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী হয়ে ঝিনাইদহে আসছিল। পথিমধ্যে ঈশ্বরদীতে সেসময় বর্নির ফুপাতো ভাই ছাদিমুল হক মুন এর সাথে দেখা করে রাতে বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের বড়দাহ নামক স্থানে মাথায় আঘাত লেগে গুরুতর অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়েছিল এসআই আকরাম। পরে পথচারীরা রাতেই তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রপচারের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।এর কিছুদিন পর ১৩ জানুয়ারী ২০১৫ সালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আকরাম। এদিকে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে মারা যান আকরামের মা। এই হত্যাকান্ডের সাথে বর্নির ফুপাকো ভাই সহযোগীতা করেছিল, যার দরুন ছাদিমুল হক মুনকে বাচাতে কিছুদিন পর তার সাথে ছোট বোন ঐশিকে বিয়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, স্ত্রীর সাথে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের পরকীয়ার জেরে এসআই আকরামকে হত্যার অভিযোগ এনে সঠিক বিচার চেয়ে গেল ১৭ ফেব্রুয়ারী ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিল নিহত এসআই আকরামের পরিবার। এ সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে গতকাল মাগুরা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আকরামের স্ত্রী বনানী বশির বর্ণি বলেন, বাবুল আক্তারকে আমি চিনি না। তার সাথে পরকীয়ার ঘটনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আকরামে বোন’রা মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাকে হয়রানী করছে।