৮ রকমের ত্বকের সমস্যা গর্ভাবস্থায়
1 min readগর্ভাবস্থায় কারো কারো ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেলেও খুব কম সৌভাগ্যবান নারী আছেন যাদের গর্ভাবস্থায় ত্বকের সমস্যা হয়না। বেশীর ভাগ গর্ভবতী নারীর ত্বকেই কালো দাগ, মাথার চুল পাতলা হয়ে যাওয়া, অস্বাভাবিক হারে লোমের বৃদ্ধি, ব্রণ, স্ট্রেচ মার্ক এবং নখ ভাঙ্গার মত সমস্যাগুলো হয়ে থাকে। কানেক্টিকাট এর নিউ হেভেন এর ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিন এর ডারমাটোলজি এর অধ্যাপক ও এমডি এবং ‘টোটাল স্কিন’ নামক বইয়ের লেখক ডেভিড লেফেল বলেন, গর্ভবতী নারীদের মধ্যে প্রায়ই গোলাপি আভা দেখা যায়, কিন্তু তাদের মধ্যে আরো অনেক কিছুই দেখা যায়’। গর্ভাবস্থায় নারীর ত্বকে যে সমস্যাগুলো দেখা যায় সেগুলোর বিষয়ে জেনে নিই চলুন।
১। ব্রণ
নিউ ইয়র্ক এর কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস এন্ড সারজিয়নস এর এসোসিয়েট ক্লিনিক্যাল প্রফেসর এবং জুভা স্কিন এন্ড লেজার সেন্টারের মেডিকেল ডাইরেক্টর ও এমডি ব্রুস ই কারটজ বলেন, ‘গর্ভবতী নারীদের ত্বকের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ব্রণের অবস্থা খারাপ হওয়া’। মুখে, বুকে বা পিঠে ব্রণ এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। হরমোনের ওঠানামার কারণেই ব্রণের উপর প্রভাব পরে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় পুরুষ সেক্স হরমোন এন্ড্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা তৈল গ্রন্থির উপর প্রভাব ফেলে। ফলে তৈল গ্রন্থি প্রচুর তেল (সিবাম) উৎপন্ন করে। তৈল গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে ব্ল্যাক হেডস হয়। আতংকিত হবেন না কারণ প্রসবের পরে এদের বেশীরভাগই চলে যায়। তিনি বলেন, আলফা হাইড্রোক্সি এসিডযুক্ত ক্লিঞ্জার দিয়ে প্রতিদিন ত্বক পরিষ্কার করলে এর প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনা যায়।
২। স্পাইডার এঞ্জিওমাস
ডেভিড লেফেল বলেন, গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে বৃদ্ধির জন্য অনেক কিছুই উৎপন্ন এবং উচ্চমাত্রায় রক্ত প্রবাহিত হয়। ত্বকের মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহিত হওয়ার কারণেই তখন তার মধ্যে গোলাপি আভা দেখা যায়, কিন্তু এই অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহের কারণে রক্তনালীতে ভাঙ্গন দেখা যায় যাকে স্পাইডার এঞ্জিওমাস বলে। কাটজ বলেন, কিছু গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে মুখ, বুক, হাত বা পেটেও দেখা যায় স্পাইডার এঞ্জিওমাস। তিনি বলেন, এঞ্জিওমাস গর্ভাবস্থার পরে ঠিক হয়ে যায়, যদি না হয় তাহলে লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে কার্যকরীভাবে দূর করা যায়।
৩। স্ট্রেচ মার্ক
৯০ শতাংশেরও বেশি গর্ভবতী নারীদের স্ট্রেচ মার্ক হতে দেখা যায় বলে জানান। পেটের চারপাশে এবং কখনো কখনো বুকে বা উরুতে হতে দেখা যায় স্ট্রেচ মার্ক। ‘ডারমাটোসেস অফ প্রেগনেন্সি’ বইটির সহ লেখক ক্রোম্পোজস বলেন, ব্যায়াম এবং আলফা হাইড্রোক্সি এসিডযুক্ত লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করলে স্ট্রেস মার্ক হওয়াকে প্রতিরোধ করা যায়।
৪। মাস্ক অফ প্রেগনেন্সি
মাস্ক অফ প্রেগনেন্সিকে ক্লোয়েজমা বা মেলাজমা ও বলে যা গর্ভাবস্থায় হতে দেখা যায়। লেফেল বলেন, অরাল কন্ট্রাসেপ্টিভ গ্রহণ করেন যারা তাদের ক্ষেত্রে এটি হতে দেখা যায় এবং গর্ভাবস্থার পরে এটি চলে যায়। কিছু ক্ষেত্রে এটি থেকে যেতে পারে। তখন ব্লিচিং ক্রিম বা কেমিক্যাল পিল গ্রহণের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। ক্লোয়েজমা প্রতিরোধের জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন।
৫। চুল
কাটজ বলেন, প্রসবের ৩ সপ্তাহ পরেই নারীদের চুল পরার সমস্যা দেখা দেয়। একে টেলোজেন ইফালভিয়াম বলে, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই পুনরায় চুল গজাতে দেখা যায়। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঠোঁটের উপরের অংশে বা চিবুকে লোম গজাতে দেখা যায়। প্রসবের ৬ মাস পরেই এই সমস্যা দূর হয়ে যায়।
৬। র্যাশ
গর্ভাবস্থায় প্রুরিটিক আরটিকেরিয়াল প্যাপুলি এন্ড প্লাক্স অফ প্রেগনেন্সি (চটচচচ) এর সমস্যাটি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। চটচচচ সমস্যাটির ক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীর উদরে ছোট ছোট লাল ফোলা দেখা যায়। এই র্যাশগুলো আস্তে আস্তে উরু, পাছা, বুক এবং বাহুতে ছড়িয়ে পরে। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে চুলকানি বৃদ্ধি পায়। চুলকানি রোধী ঔষধ, অ্যান্টিহিস্টামিন, টপিকেল স্টেরয়েড ব্যবহার করে চুলকানি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৭। নখ
গর্ভাবস্থায় নখের পরিবর্তন হতে পারে। নখ ভেঙ্গে যাওয়া বা রুক্ষ হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু কেন এমন হয় তা জানা যায়নি।
৮। স্কিন ট্যাগ
ঘাড়ের চারপাশে স্কিন ট্যাগ হতে দেখা যায়। কাটজ বলেন, কেন এটি হয় তা আমরা জানিনা, হতে পারে রক্ত প্রবাহের বৃদ্ধির কারণে ত্বকের টিস্যুর বৃদ্ধির কারণে এমন হয়। প্রসবের পরে এদের চলে যেতে দেখা যায় বা পরিবর্তিত হতে দেখা যায়।
সূত্র: ওয়েব