ঘূর্ণিঝড় ফণী: আড়াই লাখ গ্রাহক এখনও বিদ্যুৎহীন
1 min readঝিনাইদহ নিউজ:
ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া পৌনে দুই কোটি বিদ্যুৎ সংযোগের অধিকাংশই পুনঃস্থাপন করা গেলেও এখনও বিদ্যুৎহীন প্রায় আড়াই লাখ গ্রাহক।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সিস্টেম অপারেশন বিভাগের পরিচালক অঞ্জন কান্তি দাশ বলেছেন, মেরামত শেষে রোববারের মধ্যেই সব সংযোগ পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তারা।
ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করে স্থলভাগে উঠে আসার পর শনিবার বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করে। এরপর তার বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে পরিণত হয় স্থল নিম্নচাপে।
ঝড়ের কারণে বহু কাচা ঘর উড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য গাছপালা উপড়ে যায়। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে এবং তার ছিঁড়ে দুই কোটি ৭০ লাখের বেশি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পল্লী বিদ্যুতের পরিচালক অঞ্জন কান্তি দাশ রোববার দুপুর বলেন, তাদের দুই কোটি ৬০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে এক কোটি ৭০ লাখ গ্রাহকের সংযোগ ঝড়ের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।
“আমরা দ্রুত লাইন মেরামত করে পুনঃসংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আজ দুপুর পর্যন্ত আড়াই লাখের মত গ্রাহকের পুনঃসংযোগ দেওয়া বাকি ছিল। আজ বিকালের মধ্যেই সব গ্রাহককে আবার বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসা যাবে বলে আশা করছি।”
পল্লী বিদ্যুতের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ঝড়ের কারণে আরইবির ৬৭১টি খুঁটি ভেঙে পড়েছে, ৮০১টি হেলে পড়েছে। ৭৮৯টি বিতরণ ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে।
এছাড়া ১০ হাজার ৩৫৮টি স্থানে তার ছিঁড়ে পড়েছে। মিটার ভেঙেছে ৫ হাজার ৭৯১টি। এক হাজার ৭৮৬টি ইনসুলেটর নষ্ট হয়েছে, ক্রস আর্ম নষ্ট হয়েছে ১১৮৪টি।
পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা জানান, কম বেশি সব এলাকাতেই কিছু না কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাও, রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, যশোর-১, যশোর-২, এসব এলাকায় বিদ্যুতের লাইনের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
ফণীর কারণে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ১৮২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে দাবি করে অঞ্জন বলেন, মাঠে তাদের নিজস্ব ও ঠিকাদার মিলিয়ে ৪০ হাজার লোক মেরামত কাজে নিয়োজিত আছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পরিচালক (জনসংযোগ) সাইফুল হাসান চৌধুরী জানান, তাদের ২৮ লাখ গ্রাহকের মধ্যে দুই লাখ ১০ হাজার সংযোগ ঝড়ের কারণে বিকল হয়েছিল। রোববার দুপুরের মধ্যে সব সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাশহরগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে আছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-ওজোপাডিকো।
এ কেম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উদ্দিন বলেন, ঝড়ের কারণে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের পিলার হেলে পড়া, ট্রান্সমিটার বিকল হওয়াসহ অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। তবে শনিবার বিকাল ৪টার মধ্যেই সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা গেছে।
“খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালীতে বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু খুঁটি পড়ে গিয়েছিল, কিছু বাঁকা হয়ে গিয়েছিল। লোকবল আগেই রেডি ছিল। গতকাল বিকাল ৪টা নাগাদ ঠিক করা হয়েছে।”
তিনি জানান, পটুয়াখালী ও বরগুনার লাইন দীর্ঘ সময় বিকল ছিল। এ লাইন দীর্ঘ হওয়ায় পুনঃস্থাপনে সময় লেগেছে বেশি।
“পটুয়াখালীর পায়রায় আমাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সেটাও বিকল হয়েছিল। খুলনা শহরের বেশ কিছু ফিডার ট্রিপ করেছিল। কর্মীরা আগে থেকেই প্রস্তুত থাকায় অল্প সময়েই তা মেরামত করা গেছে।”
ঝড়ে ওজোপাডিকোর কত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল জানতে চাইলে শফিক উদ্দিন বলেন, “সেটা হয়তো সঠিকভাবে বলা যাবে না। তবে নিয়মিত লোড ৫৫০ মেগাওয়াট থেকে কমে ১৭২ মেগাওয়াটে চলে এসেছিল।”
ওজোপাডিকোর অধীনে ১১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩০ জন গ্রাহক রয়েছে বলে জানান তিনি।