কোন পথে ঐতিহ্যবাহী শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
1 min readঝিনাইদহ নিউজ:
ফৌজদারী মামলা ও দুর্ণীতির দায়ে প্রধান শিক্ষিকার অপসরণ দাবিতে ঝিনাইদহের শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা তালা ঝুলিয়ে দেয়ার পর থেকে অচলাবস্থা চলছেই । প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দার কে অবাঞ্চিত ঘোষনা করে নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেয়া হয় । গত ২৮ এপ্রিল রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিদ্যালয়ের মোট ৪০জন শিক্ষক-কর্মচারী এক মিটিং ডেকে এ সিদ্ধান্ত নেয় । তারা প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দারের কক্ষ সহ সকল শ্রেণী কক্ষ, ল্যাব ও অন্যান্য কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
শিক্ষক-কর্মচারীদের টাঙ্গানো ঘোষনা সংক্রান্ত নোটিশে বলা হয়েছে, বিদ্যালয় কে বাঁচানো ও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সর্বসম্মতিক্রমে আলোচনা সভা হয় । আর্থিক দুর্ণীতি, শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রীদের সাথে সর্বদা দুর্ব্যবহার, চাকুরী থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের অপসরণের হুমকি, বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা না মানা সহ ফৌজদারী মামলার আসামী হওয়ায় প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দার কে অবাঞ্চিত ঘোষনা করা হলো । এছাড়া অবিলম্বে তার পদত্যাগ করার দাবি জানানো হয়েছে ।
প্রসঙ্গত এ ঘটনার কিছুদিন আগে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষিকার অপসরণ দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ।
ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী এই শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে কখনো ঝুঁলছে তালা, কখনো বা তাকে যায় না পাওয়া, কখনোবা শিক্ষার্থী-অভিভাবক এমনকি শিক্ষকরা স্কুল ছেড়ে নেমে পড়ছে রাস্তায় ! ক্ষোভ-বিক্ষোভ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ, স্মারকলিপি দেয়া সহ একের পর এক চলে আসছে এমন অবস্থা । বিদ্যালয়ের তহবিল তছরুপ, ভুয়া বিল ভাউচার বানিয়ে ১০ লক্ষাধীক টাকা আত্মসাত, শিক্ষার্থীদের মানষিক ও শারিরীক নির্যাতন, শিক্ষকদের সাথে দূর্ব্যবহার- অমানবিক আচরণ, এমন হাজারো অভিযোগ স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দারের বিরুদ্ধে। এদিকে মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক, দুদক সহ সংশ্লিষ্ঠ নানা দপ্তর আর কর্তৃপক্ষের কাছে গত ১ বছরে বিভিন্ন লিখিত অভিযোগ দিলেও আলোর মুখ দেখিনে কোন তদন্তই । এদিকে ভেঙ্গে পড়তে চলেছে বিদ্যালয়টির চেইন অব কমান্ড ।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে গত ১ বছরে ১০ লক্ষাধীক টাকার তহবিল তছরুপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল বে-সরকারী এই বিদ্যালয়টির খোদ প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দারের বিরুদ্ধে। ১বছর আগে এসব নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দেয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া । অনিয়মের প্রতিবাদে শিক্ষকরা পর্যন্ত ক্লাস বর্জনও করেছিল। তবে পরিস্থিতি এখন আরো ভিন্ন, অপসরণ দাবিতে রাস্তায় শিক্ষার্থী-শিক্ষক- অভিভাবক ।
সর্বশেষ শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের সময় ক্যাশখাতা, নোটশীট, ভাউচার সবই প্রধান ক্লার্কের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষিকা নিয়ে গেছে, কিছুই তার দপ্তরে নেই বলে জানান বিদ্যালয়টির হেডক্লার্ক আফরোজা জামান।
এদিকে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর এই শিক্ষিকা স্কুলের ফেইসবুক আইডির পেজ থেকে শিক্ষক ও সাংবাদিকদের ক’রুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় সাংবাদিকরা মামলা করেন আইসিটি আইনে । পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের মাধ্যমে তদন্তের পর তা গত সপ্তাহে থানায় রেকর্ড হয় । এরপর থেকে পুলিশ তাকে খুঁজতে থাকে বলে জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আয়ুবুর রহমান । পরে অবশ্য এ মামলায় জামিন পেয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন ।
‘১বছর আগে দপ্তরগুলোতে অভিযোগ দেয়া হলে তদন্ত করে মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে সেসব তদন্তের অনেক কিছুর সত্যতা তো অবশ্যই ছিল তবে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে আজো জানতে পারেননি’ উল্লেখ করে স্কুলটি প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসার সুশান্ত কুমার দেব । তিনি বলেন ‘একজন শিক্ষক হিসাবে ব্যক্তিগতভাবে লজ্জা পেয়েছি, শিক্ষার্থী-ছাত্ররা যদি কোন কারণে বিক্ষুব্ধ হয় আমি মনে করি আমার এ পদে থাকা ঠিক না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটি কি আমার বাপের চেয়ার, বাপদাদার চৌদ্দ পুরুষের সম্পত্তি ? শিক্ষা কাঠামোর সাথে জড়িত যত ধরনের অনৈতিক, দুরাচার, দুষ্ট, চরিত্রহীন মানুষ আছে তাদের নিমূল চান’ বলেও উল্লেখ করেন ।
ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের তদন্তপরবর্তী কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে পারেননি বলে জানান শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উসমান গনি । সব শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের উপর ক্ষুব্ধ এবং বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ক্রমেই কমছে বলেও তিনি জানান ।
অন্যদিকে দ্রুত এই প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও অপসরণ দাবি করেছেন আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষক কর্মচারীবৃন্দ । তার অপসরণ ও পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দিয়েছে শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ ।
এদিকে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা ও শিক্ষক উভয়পক্ষের দোষ আছে উল্লেখ করে ম্যানেজিং কমিটির আহবায়ক তৈয়বুর রহমান জানান, কিছু মানুষ আবার চাই ঐ শিক্ষিকা কে সরিয়ে সে চেয়ারে বসতে । তিনি বলেন, বারবার উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেয়া হলেও পরবর্তীতে আবার বিদ্যালয়ে অচলাবস্থা তৈরী হচ্ছে ।
উল্লেখ্য, শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত নেন দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দার । উপজেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপিঠে বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১১শত, আর শিক্ষক কর্মচারীর সংখ্যা ৪২জন।