ঝিনাইদহে হাজারো পরিবারে কুঁচে নিয়ে এসেছে স্বচ্ছলতা
1 min read
ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় হাজারো পরিবারে কুঁচে শিকার ও ব্যবসা করে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। বিশেষ করে কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়া নয় বাইসা, খালকুলা, বাদুরগাছাসহ ঝিনাইদহ জেলার সকল উপজেলার কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই হাজার হাজার পরিবার কুঁচে শিকার ও ব্যবসায় স্বচ্ছলতা পেয়েছে। কুঁচে ব্যবসায়ীদের সূত্র মতে ঝিনাইদহ জেলায় শিকারি ও ব্যবসায়ী মিলে কমপক্ষে ৫হাজার লোক এই পেশায় জড়িত।
দীর্ঘ ১৫বছর ধরে কুঁচে শিকার করা গয়া দাস বলেন, ‘শুধু আমি নয় এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ সুদে ঋনে জর্জরিত হয়ে তাদের সহায় সম্বল সব হারিয়েছিল। বর্তমানে কুঁচে শিকার পেশায় এসে সুদে ঋন থেকে মুক্তি পেয়েছে অনেকে। এ গ্রামে সুদে ঋন গ্রস্থ্য লোক এখন আর তেমন নেই।’
জেলার একই উপজেলার কুঁচে শিকারি দিপক ও কিশোর জানান, তারা ঝিনাইদহ জেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের কেজুলি বিল, কোটচাঁদপুর উপজেলার দোপিলা, সদর উপজেলার গাড়াগঞ্জ, যশোর বাস টার্মিনালের পাশের জলাভূমি, বরিশালের বিভিন্ন হাওড় ও বিল থেকে কুঁচে শিকার করেন। এছাড়া কুষ্টিয়া কুমারখালি, যশোর জেলার কেশবপুর, চৌগাছা, বসুন্দিয়া, খুলনার ফুলতলা, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার জলাবদ্ধ অঞ্চল থেকেও কুঁচে শিকার করা হয় বলে তারা জানান। কুঁচে সাধারণত হাত দিয়েই ধরা হয়। তবে বর্ষা মৌসুমে বড়সি ও চাই নামক বাঁশের তৈরী এক ধরনের যন্ত্র দিয়ে কুঁচে শিকার করা হয়।
কালীগঞ্জ ও শৈলকুপার কয়েকজন কুঁচে শিকারির সাথে কথা বলে জানা যায় মাঝারি সাইজের প্রতি কেজি কুঁচে ১’শ ৪০টাকা থেকে ১’শ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে শীত মৌসুমে কুঁচের সাইজ বেশ বড় হয়। এ সময় কেজি প্রতি কুঁচে ২’শ৫০টাকা থেকে ৩’শ টাকা দরে বিক্রি হয়। এতে সিজেনে জন প্রতি প্রতিদিন কমপক্ষে ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা আয় হয়।
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কুঁচে ব্যবসায়ী বিপুল দাস, বেজপাড়া গ্রামের গনি দাস, তোতা দাস, যাদব দাস, রিপন দাস, শংকর দাস ও দেবেন দাস জানান, ঝিনাইদহ জেলা থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২০টন কুঁচে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকার আড়ৎদাররা দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে কুঁচে সংগ্রহ করে তা চীনে রফতানি করে। তারা দাবী করেন, কুঁচে রফতানির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিতে প্রতি বছর যোগ হচ্ছে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা।
শৈলকুপার কুঁচে ব্যবসায়ী কুমার বিশ্বাস জানান, ‘বছরের আষাঢ়, শ্রাবন, ভাদ্র ও আশ্বিন এই চার মাস অফ সিজেন। এ সময় কুঁচে তেমন পাওয়া যায় না। অফ সিজেনে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতার দাবি করেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ সাইদুর রহমান রেজা বলেন, উপজেলায় কুঁচে শিকারির সঠিক পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। এ পেশাজীবিদের জন্য কাঁকড়া ও কুচিয়া নামে সরকারের একটি প্রোজেক্ট আছে। এমন একটি প্রোজেক্ট এই উপজেলায় চালু করার জন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করবেন বলে জানান।
আহমেদ নাসিম আনসারী
ঝিনাইদহ।