আমার বাবা কই, বাবা কে এনে দাও, একটু দেখি
1 min read
‘আমার বাবা কই, বাবা কে এনে দাও, একটু দেখি’ শত বছরের বৃদ্ধা চারুবালা এভাবইে তার পুত্র নৃশংস খুনের শিকার সেবায়েত শ্যামানন্দন দাসের একনজর দেখার জন্য বিলাপ করছিল, বারবার মুর্ছা যাচ্ছিল। পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী হত্যার রেশ কাটতে না কাটতইে এবার ঝিনাইদহে সকাল বেলা প্রকাশ্যে খুন হলো শ্যামানন্দন দাস নামের এক গোসাই । তিনি সদর উপজেলার উত্তর কাষ্টসাগরা গ্রামের শ্রী শ্রী রাধা মদন গোপাল বিগ্রহ মঠের গোসাই ও কাস্টসাগরা গ্রামের কিরোণ সরকারের ছেলে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঝিনাইদহ-ঢাকা মহাসড়কের মঠের সাথে এ হত্যাকান্ড ঘটে। তার পূর্বের বাড়ি নড়াইল জেলার মসুরি গ্রামে। তারা ৪ ভাই ২ বোন । গত ৩ বছর শ্যামানন্দন দাস এই মঠ মন্দিরে সেবায়েত হিসাবে ছিলেন।
এলাকাবাসী জানায়, ভোর ৫ টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উত্তর কাষ্টসাগরা গ্রামের শ্রী শ্রী রাধা মদন মঠ মন্দিরের পুজা দেবার জন্য মন্দিরের পাশ থেকে ফুল কুড়াচ্ছিল। এ সময় ৩ জন যুবক মটরসাইকেলে করে এসে তাকে মন্দিরের পাশে প্রাচীরের কাছে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। এখনপর্যন্ত এ হত্যাকান্ডের দায় কেউ স্বীকার করেনি।
ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী কাষ্টসাগড়া গ্রামের দিপালী রাণী জানান, ‘তিনি বাড়ির পাশে কলাই ক্ষেত থেকে কলাই তুলছিলেন। সেবায়েত শ্যামানন্দন দাস এর সাথে মন্দিরের পাশে তার দেখা হয়েছিল । ওনাকে পার হবার পরপরই একটি মটরসাইকেলে ৩ জন ওনার উপর ধারালো অস্ত্রদিয়ে আঘাত শুরু করে। আমি চিৎকার দিয়ে পালিয়ে যায়’।
এলাকাবাসী জানায়, তার মতো ভাল মানুষ এ এলাকায় আর নেই। কেউ তাকে হুমকি দিচ্ছে এমন কথা শুনিনি। আমরা এ ঘটনার দ্রুত বিচার চায়।
ঝিনাইদহ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নারায়ন চন্দ্র জানান, আগের হত্যাকান্ডের সাথে এটির মিল রয়েছে।
এদিকে, এ হত্যাকান্ডের পরপরই বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। জেলার পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জানিয়েছেন, ঘাতকরা মোটর সাইকেলে এসে এলাপাতাড়ি কুপিয়ে প্রথমে যখম করে। তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে হত্যার আগে এটি রেকি করা হয়েছিল। ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার জানান, একই ধরনের হত্যাকান্ড ঘটে চলেছে, তদন্ত করে এসবের বিচার করা হবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান জানান, এই হত্যাকান্ডের সাথে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। খুণীদের দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত গত মাসের ৭ জুন মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের খড়াসিং ও সোনাইখালীর মাঠের মধ্যে মহিষা ভাগাড় নামক স্থানে আনন্দ গোপাল গাঙ্গলী (৬৪) নামে এক হিন্দু পুরোহিত কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা সোনাইখালী মন্দিরের পুরোহিত ছিল। এ ঘটনার দায় ম্বীকার করেছিল আইএস।
এর আগে ১৪ মার্চ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক (৪৮) নামের এক হোমিও চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা করে। এদিন রাত ১০টার দিকে কালীগঞ্জ গান্না সড়কের কৃষি অফিস পাড়ায় এই হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুর রাজ্জাক কালীগঞ্জ উপজেলার গান্না সড়কের কৃষি অফিস পাড়ার মৃত হাশেম আলী খানের ছেলে। হত্যার পর রাতেই আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস তাদের অনলাইন “সাইট ইনটেলিজেন্টে” ইংরেজি ও আরবী ভাষায় একটি বার্তা প্রকাশ করে। আইএস প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি করেছে নিহত আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন প্রথম শ্রেণির শিয়া ধর্ম প্রচারক।
এদিকে গত ৭ জানুয়ারি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের বেলেখাল বাজারে সমির উদ্দীন খাজা (৬৫) নামের এক হোমিও চিকিৎসককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। হত্যার পর আইএস হত্যার দায় শিকার করে একটি বার্তা প্রকাশ করে। সমির উদ্দীন মুসলিম থেকে খ্রীষ্টান ধর্ম গহন করে। নিহত জমির উদ্দীন খাজা কালুহাটি গ্রামের সুরত আলীর ছেলে।
এভাবে ঝিনাইদহে একের পর এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সহ ভিন্নধর্মাবলম্বীদের হত্যার ঘটনায় জেলা জুড়ে তীব্র আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এসব ঘটনার বিচার দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন মানববন্ধন, সভা সমাবেশ অব্যহত রেখেছে।
এদিকে শ্রী শ্রী রাধা মদন মঠ মন্দিরের সেবায়েত হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখনো কোন মামলা হয়নি, কেউ আটক বা গ্রেফতার হয়নি। তবে জেলা জুড়ে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে।