Fri. Dec 20th, 2024

ঝিনাইদহ নিউজ

সবার আগে সর্বশেষ

কৃষকনেতা মাস্টার ইমান আলী’র স্মরণে স্মরণ সভা হাটে হাটে সরকারী ক্রয়কেন্দ্র খুলে ধান ক্রয় এবং কৃষিতে ভর্তুকির দাবি

1 min read

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
হাটে হাটে সরকারী ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ধান ক্রয় এবং কৃষিতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিয়ে সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ, সার, বীজ, ডিজেল বিনামূল্যে প্রদানের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি ।
বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি প্রয়াত কৃষকনেতা মাস্টার ইমান আলী’র ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রোববার সকালে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামে বটতলায় এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্মরণ সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া সহ বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতৃবৃন্দ যোগ দেন ।


সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তোজাম্মেল হোসেন, কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির, সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি.এম. শামীমুল হক, প্রচার সম্পাদক মোকতারুল ইসলাম মুক্তি ।
এছাড়া কেন্দ্রীয় সদস্য ও ঝিনাইদহ জেলা সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন ফারুক, জেলা সভাপতি ডাঃ ওলিয়ার রহমান, কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি আবুল কাসেম, যশোর জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক সমীরণ বিশ্বাস, মাগুরা জেলার অন্যতম নেতা ও শালিখা থানার সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মাস্টার, ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক আতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি আব্দুস সালাম শাহ, যশোর জেলা সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাস, কুষ্টিয়া জেলার সাধারণ সম্পাদক পলান বিশ্বাস, মাগুরা জেলার আহ্বায়ক মকবুল হোসেন, জাতীয় ছাত্রদল যশোর জেলার অন্যতম নেতা মধূ মঙ্গল বিশ্বাস ও পরিবারের পক্ষ থেকে তৃতীয় পুত্র মুনির হোসেন মণি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, মাস্টার ইমান আলী সমগ্র জীবন ধরে কৃষক-জনতার তথা শোষিত জনগণের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। তার এই সংগ্রামী জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে কৃষক-জনতাকে তার প্রাণের সংগঠন কৃষক সংগ্রাম সমিতির পতাকাতলে সমবেত করতে হবে।
সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির সহ বক্তারা বলেন, হাটে হাটে সরকারী ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ধান ক্রয় এবং কৃষিতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিয়ে সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ, সার, বীজ, ডিজেল বিনামূল্যে প্রদান করতে হবে। তিনি বলেন চলতি বছর দেশের দুয়েক জেলায় জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ধান ক্রয় করছেন বলে মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ জেলায় রাতের আধারে ধান ক্রয়ের পরিবর্তে স্লিপ ক্রয়-বিক্রয় চলছে বলে জানা গেছে। এ দুর্নীতি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। উৎপাদন খরচের সাথে সঙ্গতি রেখে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের মূল্য নির্ধারণ, মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের অতি মুনাফার হাত থেকে রক্ষা করা, প্রাকৃৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ এবং চাষ অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।, কৃষি ঋণ মওকুফ, সুদমুক্ত কৃষি ঋণ প্রদান করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নাই। প্রতিবছর কৃষি কাজে লোকসান/ঘাটতি হওয়ায় যে সমস্ত কৃষক পরিবারের সদস্য চাকুরী/ব্যবসা বা বিকল্প কোন অর্থ উপার্জনের উৎস থাকে সাধারণত তারা খাবারের জন্য কিছু জমিতে চাষ করে বাকী অংশ জমি বর্গা বা লিজ, অনেকে সকল জমি বর্গা বা লিজ দিয়ে থাকেন। মূলত দেশের কৃষি উৎপাদনের সিংহভাগই করছে এখন বর্গা/লিজ চাষিরা। ফলে খাস জমি ভূমিহীন গরিব কৃষকদের মাঝে বন্টন, আবাদী সময় বাদে অন্য সময় এই ভূমিহীন-গরীব কৃষকদের জন্য বিকল্প কাজের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার দাবি জানান। এ প্রেক্ষিতে ধানের উৎপাদন খরচ কমিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্রদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার জন্যে কৃষি উপকরণের দাম কমাতে হবে। এমতাবস্থায় ধানসহ কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত, সরকারী ক্রয় কেন্দ্রের অধীনে জেলার প্রতিষ্ঠিত হাটবাজারগুলোতে অস্থায়ী ক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ক্রয়ে যথাযথ ব্যবস্থা, খাদ্যশস্য মজুদ রাখার ব্যবস্থাপনাকে ৪০ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত করা, অতিরিক্ত টোলা আদায় ও ওজনে কারচুপির বিরুদ্ধে, ভূমিহীন-গরিব কৃষকদের পূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থাসহ দ্রব্যমূল্য জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার জন্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
স্মরণ সভায় নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, এতদঞ্চলে যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণ করে এদেশের প্রকৃতি নির্ভর সেচ ব্যবস্থা তথা নদী নালা খাল বিল ইত্যাদিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ওয়াপদা সৃষ্ট বেড়ি বাধ ও অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততার সমস্যা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের উজানে প্রতিবেশী ভারত রাষ্ট্র কর্তৃক আন্ত:সীমান্ত নদ নদীর ওপর একতরফা বাধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার বাংলাদেশের নদ নদী পানিশূন্য করে ফেলছে; দেশের ছোট ছোট নদী খাল ইতিমধ্যে অস্তিত্ব হারিয়েছে, এমন কী প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলোও এখন মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। কৃষককে এই সব প্রতিকূলতার মোকাবেলা করেই ফসল উৎপাদন করতে হচ্ছে।


কৃষকনেতা মাস্টার ইমান আলী’র স্মরণে বক্তারা আরো বলেন, চলমান বৈশ্বিক মন্দা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বাজার ও প্রভাববলয় পুনর্বন্টন প্রশ্নে আন্ত:সা¤্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে বাংলাদেশসহ এতদঞ্চলকে নিয়ে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বৃদ্ধি করে চলেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এশিয়া-প্যাসেফিক রণনীতির প্রেক্ষিতে ইন্দো-প্যাসেফিক করিডোর; সা¤্রাজ্যবাদী জাপান বে অফ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি); পুঁজিবাদী চীন বিসিম অর্থনৈতিক করিডোর ইত্যাদি দিক কার্যকরী করে চলেছে। বৈশ্বিক মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে মহামন্দার দিকে ধাবিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বাজার ও প্রভাববলয় পুনর্বন্টন নিয়ে মুদ্রাযুদ্ধ, বাণিজ্যযুদ্ধ, ইরান, উত্তর কোরিয়া, ভেনিজুয়েলাসহ বিশ্বের দেশে আগ্রাসী যুদ্ধ তৎপরতা তথা বিশ্বযুদ্ধের বিপদ বৃদ্ধি করছে।
এর আগে সকাল ১০টায় ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মলি¬কপুরস্থ সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পন, ১ মিনিট নিরবতা পালন ও শপথ পাঠ করা হয়। স্মরণ সভাটি পরিচালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম-সম্পাদক কামরুল হক লিকু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *