বাফার সার গোডাউন থেকে কোটি টাকার সার গায়েব
1 min readঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বাফার সার গোডাউন থেকে কোটি টাকা মূল্যের ১০ হাজার ৯৪০ বস্তা ইউরিয়া সার গায়ের হওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এই সার কিভাবে গায়েব হলো তার কোন হিসাব নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে। তবে ধারনা করা হচ্ছে এ সব সার গোডাউনের লোড-আনলোড ঠিকাদার ও ইনচার্জের যোগসাজসে বিক্রি করা হয়েছে।
এরআগে ২০১১ সালের অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের ৪ হাজার ২৮০ বস্তা ইউরিয়া সার একই রকম ঘাটতি পাওয়া যায়। সে সময় গোডাউন ইনচার্জ আবুল কালাম আাজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে লোড-আনলোড ঠিকাদারদের সাথে আতাত করে সার বিক্রি করে দিয়েছে। এমন অভিযোগের পর ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে আশরাফুল ইসলামকে আহবায়ক করে এবং বিসিআইসির সিনিয়র জিএম মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পৃথক দুটি তদন্ত টিম কাজ শুরু করেন। তদন্ত চলাকালিন তার কর্মস্থল কালীগঞ্জে অবস্থানের নির্দেশনা থাকলেও গোডাউন ইনচার্জ ২০১১ সালে ১০ সেপ্টেম্বর রাতের আধারে স্বপরিবারে পালিয়ে যান।
এই বাফার গোডাউন থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের ২১৫ জন তালিকাভুক্ত ডিলারের মাধ্যমে সার সরবরাহ করা হয়।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বাফার সার গোডাউনের ইনচার্জ মাসুদ রানা জানান, চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে করা এক হিসাব অনুযায়ি ৫৪৭ মেট্রিন টন অর্থাৎ ১০ হাজার ৯৪০ বস্তা ইউরিয়া সার গোডাউনের স্টকে কম পেয়েছেন। তবে কবে কখন কারা এই সার চুরির সাথে জড়িত তা বলতে পারেননি। তিনি আরো জানান, ৩ মাস হলো এখানে এসেছেন। এই সার আগে থেকেই স্টক রেজিষ্টারে কম ছিল।
এদিকে চলতি বছরের জুলাই মাসে বস্তায় ২ থেকে ৪ কেজি কম থাকার অভিযোগ সার গোডাউন আসা ১৬ ট্রাকে ৩শ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার আটকে রাখা হয়। তার আগে কয়েকশ মেট্রিক টন কম ওজনের সার ডিলারদের হাত ঘুরে কৃষকদের হাতে পৌছে যায়। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের নবাব এন্ড কোম্পানী এই সার সরবরাহ করে বলে জানা যায়।
এসময় নবাব এন্ড কোম্পানীর অপারেশন অফিসার ওসমান আলীর সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ তরা হলে তিনি সার কম থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, দীর্ঘদিন ধরে সারগুলো ঘাটে পড়ে ছিল। যার কারনে কিছু বস্তার সার আবহাওয়ার কারনে কমে যেতে পারে। তবে সার ডিলারদের অভিযোগ বাফার কর্মকর্তারা আর্থিক সুবিধা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কম ও জমাট বাঁধা সার সিরিভ করে থাকেন।
কালীগঞ্জ বাফার গোডাউনের ইউরিয়া সার নিয়ে বেপরোয়া অর্থ বানিজ্য করা হয়ে থাকে এরকম অভিযোগ দির্গদিনের। গোডাউনের ইনচার্জ, হিসাব রক্ষক ও লোড আনলোডের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যৌথ ভাবে এই অর্থ বানিজ্যের সাথে জড়িত থকলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবসস্থা নেয়নি।
বাংলাদেশ ফারটিলাইজার এ্যসোসিয়েশন ঝিনাইদহ শাখার সভাপতি ও সার ডিরার আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর জানান, আমরা শুনেছি বাফার গোডাউনে ৬/৫’শ মেট্রিক টন সার সর্ট রয়েছে। এখন সেগুলো কি ভাবে রিকোভারি করবে সেটা বাফার কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। তবে তিনি অভিযোগ করেন, জমাট বাঁধা ও নি¤œমানের সার ডিলারদের কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এদিকে ডিলাররা অভিযোগ করেন, নিয়মানুশারে সার বাইরে থেকে আসার পর গোডাউনে নামিয়ে তারপর তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের মধ্যে বিতরন করার কথা। কিন্তু নিয়মের তোযাক্কা না করে দির্ঘদিন ধরে এই বাফার গোডাউনের ইনচার্জের সহযোগীতায় একটি চক্র মোটা টাকার বিনিময়ে সার গোডাউনে না নামিয়ে সরাসরি বিভিন্ন ডিলারদের কাছে পৌছে দিয়ে থাকে। আর এই সার আনা নেওয়ার কাজে শক্তিশালী এই চক্রের নিজস্ব ৭০টি ট্রাক নিয়োজিত রয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে কমপক্ষে ১০ বছর আগে গোডাউনে থাকা প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন জমাট বাধা নী¤œ মানের সার এখনো পড়ে রয়েছে। যা কৃষি কাজে ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে গেছে।
সম্প্রতি বিসিআইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল ও পরিচালক আব্দুল হাই কালীগঞ্জ বাফার গোডাউনে এসে গোডাউনে পড়ে থাকা জমাট বাঁধা এ সব সার ক্রাসিং করে ভালো সারের সাথে মিশিয়ে রি-প্যাক করে বিতরণের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও অফিসিয়াল নির্দেশ না আসায় জমাট বাঁধা সার তেমনই পড়ে আছে। নির্দেশ পেলেই সুযোগ মতো নী¤œমানের এ সার দেশ উন্নয়নের কারিগর কৃষকের হাতে পৌছে দেওয়া হবে।
তারেক মাহমুদ